আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলা (ধারাবাহিক উপন্যাস, চতুর্দশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
559

আবার উৎপাত । কোনোরকমে শাড়ি পরে কলেজে ছোটা । মুখে কিচ্ছু মাখেনি । সাধারণ ড্রেসে তড়িঘড়ি কলেজে ঢুকতে যাবে এমন সময় বয়স্ক দুজন বুড়ো ও বুড়ি আসানের দিকে তাকিয়ে বললো, “ভিক্ষা, মা । সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি । দুটো টাকা দেবে মা ।“
বুড়ির দিকে তাকিয়ে আসানের মনের মধ্যে কেমন যেন মায়া জন্মালো । তার ক্লাসে ঢোকার ব্যস্ততা সত্বেও একরাশ বিরক্তির মুখে আসান বুড়ো ও বুড়ির উদ্দেশে বললো, “তোমরা সকাল থেকে খেতে পাওনি, আম তাতে কী করবো ।“
দুটো টাকা পেলে চা খেতাম ।
দুই টাকায় কী চা পাওয়া যাবে ?
না দিদিমণি, আমরা ইতিমধ্যে চার টাকা পেয়েছি । কলেজ থেকে বেরিয়ে রাস্তা ঘেঁষে তেওয়াড়ির চায়ের দোকান । সেখানে এক কাপ চা তিন টাকা । তুমি দুই টাকা দিলে আমরা দুজনে চা খেতে পারতাম ।
“শুধু চা খেলেই পেট ভরবে ?” আসান তারপর ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বললো, “এখানে এক শত টাকা আছে । তেওয়াড়ির দোকানে এখন চা পাউরুটি খাবে আর দুপুরে পেট ভরে মাছ ভাত খাবে ।“
বুড়ি তখন চোখ ছল ছল করে বললো, “বাইচা থাকো মা । ভগবান তুমারে মানুষ করুক ।“
কলেজের ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসান বুড়ির কথা ভাবছে । বুড়ো-বুড়ি নিঃসন্দেহে ওপার বাংলা থেকে আগত । আশ্রয়হীনভাবে এখন তাঁদের ভিক্ষাবৃত্তি । মায়ের কাছে গল্প শুনেছে, দেশ ভাগের সময় কত মানুষ ছিন্নমূল হয়ে এদেশে এসে আশ্রয়হীনভাবে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে তার হিসেব নেই । এমনকি তার ঠাকুরদা ও ঠাকুমা নিরুদ্দেশ । দেশ ভাগের সময় তাঁরা হারিয়ে গেছেন । তাঁদের দশা এই বুড়ো-বুড়ির মতোও হতে পারে । এইসব কথা ভাবলে ঠাকুরদা ও ঠাকুমার জন্য আসানের শরীর-মন বিচলিত হয়ে ওঠে ।
ঠিক সেই সময় কলেজের এ্যাসিস্টান্ট প্রফেসর সৈকতবাবু তার সামনে । জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কোনদিকে যাচ্ছেন ।“
আগেই বলেছি, আজ আবার বলছি, “আপনি আমার ক্লাস টিচার । আমাকে “আপনি” সম্বোধনে ডাকবেন না । “তুমি” সম্বোধনে কথা বলবেন । সেটা আপনি কিছুতেই শুনছেন না । তা ছাড়া আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক মেলামেশার আঙ্গিকে “তুমি” বলে ডাকাটাই শ্রেয় ।“
সম্বোধন নিয়ে ভাবার অনেক সময় রয়েছে । অযথা কথা না বাড়িয়ে শুধু বলুন, “কোনদিকে যাবেন ।“
আমার যাওয়ার নিদ্দির্ষ্টতা নেই ।
তা বললে হবে না ম্যাডাম । আমি বর্ধমান শহরের বাইরে যাচ্ছি । প্রয়োজনে আপনার জন্য কুসুমগ্রাম পর্যন্ত যেতে পারি ।
থাক ! আমার জন্য কুসুমগ্রামে যেতে হবে না । আপনার সাথে গেলে আমার অবস্থা ঢিলে হয়ে যাবে । সকলের কৌতুহলি প্রশ্নের সামনে আমার নাভিশ্বাস অবস্থা দাঁড়াবে । তার চেয়ে বরং আপনি যে মতলবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন সেদিকে ছুটুন । আমার এতটুকু ইচ্ছে নেই বাইকে চেপে আপনার সঙ্গে শহরের বাইরে প্রদক্ষিণ করার । এমনকি কুসুমগ্রামে যাওয়ার ।
তাহলে আর কী ! আমি একাই চললাম ।
কোথায় যাবেন সেটা কিন্তু জানালেন না ?
“আপনি যেহেতু যাবেন না, আর শুনে কাজ নেই ।“ বলেই সৈকত বাইক স্টার্ট দিলো ।
হস্টেলের রুমে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সৈকতকে নিয়ে ভাবনার জগতে নিমগ্ন । সৈকত এম-ডি করার পর প্রো-ডক্‌ করছিল । তারপর বর্ধমান মেডিকেল কলেজে সহকারি অধ্যাপক পদে চাকরি । ক্লাসে ঢুকে তার প্রথম নজর আসানের দিকে । ক্লাসে আসান না থাকলে নাকি তার পড়িয়ে আরাম নেই । সৈকতের গাঁয়ের বাড়ি মালডাঙা । যেহেতু আসানের বাড়ি কুসুমগ্রাম, সেহেতু গ্রামকে কেন্দ্র করে তাদের প্রথম কথা বলার সূত্রপাত । সৈকত যদিও আসানের চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় । কিন্তু মেশে বন্ধুর মতো । দুজনের মেলামেশা এখন হস্টেলে চর্চিত বিষয় । সময়ে অসময়ে সৈকতকে নিয়ে বন্ধুদের উদ্ভট প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় আসানকে । বন্ধুদের মতে, “এই সব ছেলেরা যেমন সুমধুর ভালবাসার অভিনয়ে দক্ষ, তেমনি ছলাকলায় ভীষণ পারদর্শী । মেয়েদের সঙ্গে মিশবে খুব আন্তরিকতার সাথে । তাদের কুমতলব কিছুতেই ধরার উপায় নেই । কিন্তু বাস্তবে ভালবাসার মর্যাদা না দিয়ে বরং অশান্তিজনক পরিস্থিতির মধ্যে তোকে ফেলে দেবে । যে কয়েকদিন ক্লাস বাকী, সেই কয়েকদিন তার ভালবাসার মেয়াদ । তারপর তোকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে অন্য মেয়ের দিকে ছুটবে !“
বন্ধুদের কথায় আসান পাত্তা দিতে নারাজ । চার বছর মিশে সে যেটা বুঝেছে, সৈকত সেই রকম শঠতার ছেলে নয় । ছলনা তার ধাতে নেই । দার্জিলিং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তার পড়াশুনা । চালচলনে প্রচণ্ড স্মার্ট । আচার-আচরণে বোঝা যাবে না মালডাঙার ছেলে । মেলামেশায় চাতুরতা, নৈব-নৈব-চ । আজ পর্যন্ত কোনো অশালীন ব্যবহার করেনি । বরং উল্টোটা, খুব আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল ।
মাঝখানে একদিন সৈকতের পীড়াপীড়িতে বাইকে ঘুরতে বের হয়েছিল । আসানসোল শহর পার হয়ে সোজা কল্যাণেশ্বরী মন্দির । খুব জাগ্রত দেবী । মাইথন ড্যাম থেকে মেরেকেটে পাঁচ কিলোমিটার দূরে । বরাকর নদের পারে অবস্থিত । মন্দিরে কল্যাণেশ্বরী দেবী দর্শন করে তাদের বর্ধমান ফিরতে অনেক রাত হয়েছিল । সেই নিয়ে হস্টেলে তোলপাড় । বান্ধবীদের আলোড়নে কান পাতা দায় । বান্ধবীরা আসানকে অনেক ওলট-পালট কথা শুনিয়েছিল । অথচ হস্টেলের অন্য মেয়ে রাত্রিতে ফিরলে অতো হৈচৈ নেই । বান্ধবীদের বিমাতৃসুলভ আচরণের জন্য আসান মনোকষ্টে ব্যথিত । সেই কারণে আসান এখন মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্ত । কারও কথায় বিচলিত হওয়ার পাত্রী নয় । তাই সৈকতের সঙ্গে তার মেলামেশা বরং পূর্বাপরন্যায় এবং স্বাভাবিক ।
সৈকত টিচিং স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে । বিশাল একটা কোয়ার্টার । মাঝে মধ্যে তার মা আসেন । তবে তিনি এক-দুই দিন থাকার পর মালডাঙা ফিরে যান । বাড়িতে ব্যবসার কাজকর্ম ছাড়া জমি জায়গা দেখাশোনা নিয়ে তিনি ভীষণ ব্যস্ত । সৈকতের বাবা নেই । একমাত্র সন্তান । সেই কারণে সময় পেলেই সৈকত বাড়ি ছোটে । তবে বাড়িতে এক রাত্রির বেশী থাকে না । যদিও তার মায়ের ইচ্ছা, ছেলে মালডাঙায় চেম্বার খুলুক । কিন্তু মালডাঙায় চেম্বার খুলতে সৈকত রাজি না ।
প্রাতকালীন ভ্রমণ সৈকতের অভ্যাস । শুক্রবার সকালে প্রাতকালীন ভ্রমণে বেরিয়ে সৈকত বিপাকে পড়লো । তিনকোনিয়া পুরানো বাস স্ট্যান্ডের সামনের রাস্তার উপরে এক বুড়ির ভীষণ কান্না ! তাঁর স্বামীর ভীষণ অসুখ । জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । বর্ধমান রেল স্টেশন প্লাটফর্মে স্বামীকে শুইয়ে ডাক্তারের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন । কোনো ডাক্তারবাবু ফিস্‌ ছাড়া বুড়ির স্বামীকে দেখতে যাবেন না । তাই নিজের পোড়াকপালের কথা ভেবে বুড়ির কান্না !
“কী হয়েছে মাসিমা ।“ সৈকত জানতে চাইলো ।
সৈকতের মিষ্টি কথায় বুড়ি তাজ্জব । তারপর তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার পতিদেবতা জ্বরে কাহিল । জ্বরে শরীর পুইড়া যাইতাছে । ডাক্তার পাইতাছি না । স্টাশনের বগলের নিরোদ ডাক্তার কর্তারে দ্যাখতে যাইতে অরাজি । তাগো ফিস চাই । আমি ফিস কই পামু । কর্তারে বাঁচাইতে পারুম কিনা চিন্তায় চিন্তায় আমার ঘুম নাই !”
চলুন মাসিমা ।
আরে পুলা ! আপনি গিয়া কী করবেন ? ডাক্তার দরকার ?
ঠিক আছে চলুন । আগে আমি দেখি, তারপর দরকার হলে ডাক্তার ডাকবো ।
বর্ধমান স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মের শেষ মাথায় বুড়ো শুয়ে রয়েছেন । তাঁর অবস্থা সত্যিই শোচনীয় !
সৈকত বুড়োকে নিয়ে হাসপাতালে গেল । একদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে থাকতে হল । আন্তরিকতার সাথে সুচিকিৎসার জন্য বুড়ো ভাল হয়ে উঠলেন । তারপর বুড়ো ও বুড়ির করুণ কাহিনী শুনে সৈকত মনোকষ্টে বিষণ্ণ । সে জানতে পারলো, এদেশে বুড়ো-বুড়ির কোনো ঘর বাড়ি নেই । নিঃসম্বল অবস্থায় স্টেশনের প্লাটফর্মে তাঁদের দিনযাপন । দেশ থেকে তাড়া খেয়ে পালিয়ে এদেশের মাটিতে পা রাখা । সব হারিয়ে তাঁরা নিঃস্ব । বৃদ্ধ বয়সে উপার্জনের সামর্থ নেই । তাই একমুঠো খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতা । বুড়ির চোখে জল । বুড়ো-বুড়ির জীবনের করুণ কাহিনী শুনে সৈকত ভারাক্রান্ত । পকেট থেকে বের করে কিছু টাকা তাঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, “সাবধানে থাকুন ।“
শনিবার সন্ধ্যাবেলায় বাস । আসান বাস ধরার জন্য বর্ধমান বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তখন সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে । অথচ কুসুমগ্রামের বাসের হদিস নেই । অগত্যা সময় কাটাবার জন্য চায়ের দোকানের বাইরে রাখা বেঞ্চটায় বসলো । ইচ্ছা, এক কাপ চা খাওয়া । হঠাৎ বুড়ো-বুড়ির আবির্ভাব । আসানকে দেখতে পেয়ে তাঁদের কী হাসি ! যেন তাঁরা তাঁদের হারানো ধন মানিক দেখতে পেয়েছেন !
“অসময়ে কোথায় চললে দিদিমণি ?” আসানের দিকে তাকিয়ে বুড়ো জিজ্ঞাসা করলেন ।
আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি ।
“তোমার মা কোথায় থাকেন ?” আসান বিরক্ত হলেও বুড়োর কথার মিষ্টতায় তার মন থেকে বিরক্তি উধাও । আসলে বাস না আসায় আসান নিজে থেকেই কিছুটা বিরক্ত । তার উপর বুড়ো-বুড়ির উপর্যুপরি প্রশ্নে নাজেহাল । তবুও বুড়োর কথায় কোথায় যেন আন্তরিকতার টান । একান্ত আপনজনের মতো মায়া মাখানো ।
“দাদু, আমি কুসুমগ্রামে যাচ্ছি । সেখানে আমাদের বাড়ি ।“
বাড়িতে কী তোমার ভাই বোন থাকে ?
“না দাদু, বাড়িতে আমার বাবা ও মা থাকেন ।“
তুমি আমাকে দাদু বললে । সুতরাং তুমি আমাদের দিদু ভাই । আচ্ছা দিদু ভাই, “তোমার বাবা ও মা কী করেন ?”
বাবার আইসক্রিমের ব্যবসা ও মায়ের ব্যাঙ্কে চাকরি ।
বাহ ! সুখী পরিবার । আর তোমার ভাই বোনেরা কী করে ?
“আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । ভাই-বোন নেই ।“ তারপর বাসের দিকে তাকিয়ে দেখে কুসুমগ্রামের বাস ঢুকে গেছে । বাসটি বর্ধমান – কাটোয়া ভায়া মেমারী, কুসুমগ্রাম, মালডাঙা, দাঁইহাট । বুড়ো-বুড়ির দিকে তাকিয়ে আসান বললো, “আমার বাস এসে গেছে । এবার আমাকে উঠতে হবে ।“ তারপর মানি ব্যাগ থেকে একশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে আসান বললো, “টাকাটা দিয়ে পেট ভরে রাতের খাবার খাবেন ।“
বুড়ো মাথা নেড়ে তাঁদের সম্মতি জানালো ।
বাসে যেতে যেতে আসানের অনুভব, “বুড়ো-বুড়িকে তার খুব চেনা চেনা লাগে । বুড়ো-বুড়ির মিষ্টি ব্যবহারের মায়ায় সে জর্জরিত । তাঁদের কথা ভাবলেই আসানের মনটা দুঃখে ভরে ওঠে । শেষ বয়সে তাঁরা দুজন স্বজনহারা, নিঃস্ব মানুষ ।“
রাত্রিতে শোওয়ার পরও ঘুরেফিরে সেই বুড়ো-বুড়িকে নিয়ে তার চিন্তা । একটু আগে সৈকত ফোন করেছিল । তার সাথে কথা বলতেও আসানের মুড কাজ করছিল না । সে নিজেও বোঝে – বুড়ো-বুড়ি ভিখারি । তা সত্ত্বে আসান তাঁদের মায়া ভুলতে পারছে না । শুয়ে শুয়ে ঠিক করলো, এবার সে বুড়ো-বুড়ির জীবনের হালহকিকৎ শুনবে । তাঁদের পূর্বেকার কথা শুনবে । অন্তত বোঝার চেষ্টা করবে, আসলে তাঁদের ভিখারি বানানোর জন্য কারা দায়ী ? ঘুমিয়ে পড়লো আসান ।
ক্লাস শেষ । ফাইনাল পরীক্ষা আসন্ন । সৈকত ধরেছে, ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আগে তারাপীঠ যাবে এবং সেটা ট্রেনে যাবে । মায়ের পায়ে পুজো দিতে । যেই কথা সেই কাজ । তারপর বুধবার যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা ।
সকালে ট্রেন । স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়ালো । শিয়ালদহ – রামপুরহাট “মা তারা এক্সপ্রেস” । ট্রেনটির খবর হয়নি । সুতরাং নিরিবিলিতে বসার জন্য জায়গা খুঁজছে । প্লাটফর্মের শেষদিকে দুজন নিরিবিলিতে বসে একান্তে যখন কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে বুড়ি আসানকে ও তাঁদের দেবতুল্য ডাক্তারবাবুকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে আনন্দে আহ্লাদিত । বুড়ি কিছু বলার আগেই সৈকত বললো, “আপনার স্বামী এখন কেমন আছেন ?”
কর্তা এহন খুব ভাল আছে বাবা ।
অবাক হয়ে গেল আসান ! তাই সৈকতকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি তাঁদের চিনলে কীভাবে ?”
শুনতে পেয়ে বুড়ি উত্তর দিয়ে বললো, “সেইদিন দাদুর জ্বর হইছালো । এই ডাক্তারবাবুর লাইগ্যা কর্তা ভালো আছে ।“
দিদিমা তুমি একা কেন ? দাদু কোথায় ?
তোমার দাদুও সঙ্গে যাইতাছে ।
সঙ্গে যাচ্ছে মানে । তোমরা কোথায় যাচ্ছ ?
আমরা বর্ধমান ছাইড়া তারাপীঠ যাইতাছি । তারা মায়ের মন্দিরে । শুনছি, খাওন-দাওনের অভাব নাই । তাই তারাপীঠে থাকার লইগ্যা যাইতাছি । তা ছাড়া সেই হানে মায়ের পুজা দিতে পারুম ।
আসান কিছুক্ষণ নীরব ।
সৈকত আসানকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি তাঁদের কীভাবে চিনলে ?”
বর্ধমান থেকে বাড়ি যাতায়াতের পথে তাঁদের সাথে আলাপ । কিন্তু আমাকে জানতে হবে তাঁদের আগের জীবনের কথা । সব হারিয়ে গেছে একথা ঠিক । কিন্তু তাঁদের সন্তান ছিল কিনা ? থাকলে তাদের হারাল কীভাবে ? অনেক প্রশ্ন আসানের মনের ভিতর । ইতিমধ্যে ট্রেন ঢুকলো বর্ধমান স্টেশনে ।
বুড়ো-বুড়িকে নিয়ে তারা একই কামরায় উঠলো । ট্রেনে অনেকটা সময় জার্ণি । সুতরাং এই ফাঁকে বুড়ো-বুড়ির অতীত ঘটনা জানা যাবে । সেই কারণেই তাঁদেরকে এক কামরায় তোলা ।
দাদু, তোমার এই দৈনদশার জন্য দায়ী কে ?
আমার পোড়াকপাল ।
পোড়াকপাল বললে হবে না । আগে কোথায় ছিলেন । আপনার ছেলে মেয়েরা এখন কোথায় বা তারা কীভাবে হারিয়ে গেল ?
বুড়োর চোখে জল । আমার একমাত্র ছেলে । বিয়ে দিয়েছিলাম আইনের স্নাতক মেয়ের সাথে । বৌমা ছিল মেয়ের মতো । কিন্তু……? তারপর বুড়োর হাউ হাউ কান্না !
কিন্তু কী দাদু ?
দরকারি কাজে আমি ও তোমার দিদিমা শহরে আত্মীয় বাড়ি যাই । সেই রাত্রিতেই দেশ ভঙ্গকারী একদল দুর্বৃত্ত আমার সোনার ছেলে বৌমাকে তাড়িয়ে জমি-বাড়ি দখল করে । আমরা ফিরে দেখি আমাদের ঘর বাড়ি বেদখল । সেই দুর্বৃত্তরা আমাদেরও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে । তারপর তিনদিন তিনরাত অভিশপ্ত জীবন কাটিয়ে অবশেষে বর্ডার পার হয়ে এদেশে আসা । প্রথমে উঠেছিলাম কালনা । কালনায় থাকা খুব কষ্ট হচ্ছিলো । প্লাটফর্মে রাত্রিতে শোওয়ার জন্য মাসোহারা দিতে হত । তাতেও আমাদের দুঃখ ছিল না । একদিন স্টেশন ম্যানেজার ডেকে বললেন, প্লাটফর্মে আর থাকা যাবে না । কেননা উপর থেকে ডিভিশনাল ম্যানেজার ভিজিটে আসছেন । তাই প্লাটফর্ম ধোঁয়ামোছা করা দরকার । তাই প্লাটফর্ম ফাঁকা করার নির্দেশ দিলেন । তারপর সেখান থেকে বর্ধমানে আসা ।
তোমার ছেলে বৌমা কোথায় হারিয়ে গেল, তার হদিস কী পেয়েছো ?
শুনেছি, আমার ছেলে বৌমাকে দুষ্কৃতিরা মেরে ফেলেছে ।
কীভাবে জানলে ?
“আমাদের যারা তাড়িয়ে দিয়েছিল তারাই চিৎকার করে বলেছিল তোর ছেলে-বৌমার মতো তোদেরও পুড়িয়ে মারবো ।“ কথাটা বলেই বুড়ো-বুড়ি দুজনের কী কান্না । অঝোরে তাঁদের চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো ।
তাঁদের কান্নাকাটির দৃশ্য দেখে সৈকতের মনটা কষ্টে ভরে উঠলো । আসানকে পুনরায় প্রশ্ন করতে নিষেধ করলো সৈকত । ততক্ষণে ট্রেন রামপুরহাট স্টেশনে ঢুকে গেছে ।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ট্রেন থেকে নামলো আসান । সৈকত আসানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখ ছলছল ।
তারপর …………?
তারপর আসান ডাক্তারীর ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ।
পরীক্ষার রেজাল্টের খবর নিয়ে ছুটে এল সৈকত । কিন্তু আসানকে না পেয়ে মোবাইলে রিং করলো সৈকত । আসান তখন কুসুমগ্রামের বাড়িতে । সৈকতের মুখে ডাক্তারি পাশের খবর পেয়ে আসান খুশিতে ভরপুর ।
ইমলি মেয়েকে নিয়ে গর্বে উচ্ছ্‌সিত ।
তিনজনে বসে খুশীতে মশগুল । তখন হঠাৎ আসান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “মা, তুমি কাদছ কেন ? আজ খুশীর দিন । একদম চোখে জল আনবে না ।“
“আজ যদি তোর ঠাকুরদা-ঠাকুমা কাছে থাকতেন, তাহলে তাঁরা আনন্দে নেচে উঠতেন ।“ বলেই ইমলি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলো ।
দাদু ঠাকুমার কথা উঠতেই আসান মাকে ভিখারি বুড়ো-বুড়ির প্রসঙ্গ তুললো । সাম্প্রতিককালে তাঁদের সঙ্গে আসান এবং সৈকতের যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো খুলে বললো । আসানের মনে আছে বুড়ো ভিখিরি বলছিলেন, তাঁর ছেলের বৌ নাকি আইনের স্নাতক । সেই কথা শোনার পর আমি এবার বাড়ি এসে তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতার খোঁজ খবর নিয়েছি এবং জেনেছি, তুমিও ঐদেশের আইনের স্নাতক ।
ততক্ষণে ইমলি বড় বড় চোখে আসানকে বললো, “এক্ষুণি আমাদের ভিখিরির কাছে যেতে হবে । তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে ভিখারিই তোর আপন ঠাকুরদা ও ঠাকুমা ।“
ইতাস মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “তোর দাদুর জন্য আমার মাঝে মধ্যে ঘুম হত না । ঈশ্বর ঠিক তোর মাধ্যমেই আমার বাবা-মাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে ।“
গাড়ি ভাড়া করলো ইতাস ।
তখন বেলা গড়িয়ে গেছে । ইমলি ও ইতাসের সবুর সইছে না । আইসক্রিম কারখানা বন্ধ রেখে তারা তিনজনে ছুটলো রামপুরহাট । বর্ধমান হয়ে তারা বোলপুরের রাস্তা ধরলো । অনেকটা রাস্তা । বোলপুর পার হওয়ার সাথে সাথে সূর্য ডুবে গেল । যখন রামপুরহাট পৌঁছালো, তখন মায়ের মন্দিরে সন্ধ্যারতির ধুম । মন্দির এলাকা লোকে লোকারণ্য । সন্ধ্যাবেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটা কষ্ট । তার উপর যত্রতত্র বিক্রেতাদের উপদ্রুপ । গাড়ি থেকে নেমে ইমলি ও আসান একদিকে আর ইতাস অন্যদিকে খোঁজা শুরু করলো ।
নতুন জায়গা । ইমলি রামপুরহাটে কোনোদিন আসেনি । আসান মাঝখানে একদিন এসে যতটুকু চিনেছিল তার উপর ভিত্তি করে তাদের খোঁজাখুজি । আসানের ধারণা, ঠাকুমা সন্ধ্যারতির সময় নিশ্চয় পুজা দেখছেন । মন্দিরের ভিতরে কোথাও রয়েছেন । সেই কারণে প্রথমে মন্দিরে ঢুকে তাদের খোঁজাখুজি । ঐ সময় মন্দির দিয়ে চলা দায় ! একদিকে মায়ের পায়ে পুস্পাঞ্জলি, অন্যদিকে ভক্তদের ছোটাছুটি । কার আগে ঠাকুর মশাইয়ের দেওয়া পঞ্চ প্রদীপের আলো ছোঁবে তার জন্য হুড়োহুড়ি । কিছুতেই লোক চেনার উপায় নেই । তবুও ইমলির উঁকিঝুঁকি । যদি মন্দিরে ঢুকে তাঁরা সন্ধ্যা পুজো দেখেন ।
বর্ধমান থেকে রামপুরহাট আসার সময় ট্রেনের ভিতর ঠাকুমা বলেছিলেন, রামপুরহাটে অতিরিক্ত পাওনা হচ্ছে মায়ের চরণে নিত্য পুজা দেওয়ার সুযোগ । সেই কারণে আসানের আশা, দাদু ঠাকুমা নিশ্চয় মন্দির চত্বরে ঘোরাফেরা করছেন ।
অনেক খোঁজাখুজি করে দাদু-ঠাকুমাকে না পেয়ে তারা হতাশ ! মন্দির থেকে বাইরে বেরিয়ে এল । ইমলি মন্দিরে মায়ের দিকে হাত জড়ো করে প্রার্থনা জানালো, “শ্বশুর শাশুড়িকে যেন ভালভাবে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি ।“
অন্যদিকে ইতাস স্টেশন প্লাটফর্মে হন্যে হয়ে ঘুরছে । জনে জনে ইতাসের জিজ্ঞাসা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুইজন ভিখিরিকে কেউ দেখেছেন কিনা ? একমাত্র স্টেশন মাস্টার স্যার বললেন, “গোপীকান্তের চায়ের দোকানে একদিন বয়স্ক দুজন মানুষকে চা খেতে দেখেছিলাম । সম্ভবত তাঁরা ভিখারি ।“
প্লাটফর্মে গোপীকান্তের পুরানো চায়ের দোকান । যার জন্য গোপীকান্তের চায়ের দোকান খুঁজে পেতে কষ্ট হল না । চায়ের দোকানে দাঁড়াতেই গোপীকান্ত ইতাসকে জিজ্ঞাসা করলো, “চা খাবেন ? চিনি দেওয়া, না চিনি ছাড়া ?”
নর্মাল চা দেবেন । তাতে দুধ, চিনি সব চলবে । এবার আমাকে বলুন তো, “আপনার দোকানে দুইজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভিখিরি কী প্রতিদিন চা খায় । তাঁরা এখন কোথায় ?”
ভিখারি দাদুর কথা বলছেন ?
হ্যাঁ ।
তাঁরা রোজ চা খায় না । ভিক্ষা করতে নানান জায়গায় যায় । সেখান থকেও চা খেয়ে ফেরে । তবে ভিখারি দুজন ভাল মানুষ । রাত্রিবেলায় প্লাটফর্মেই শুয়ে থাকে । সকাল হলেই আবার দুজনে ভিক্ষার উদ্দেশে বেরিয়ে যায় ।
তাঁরা এখন কোথায় ?
কেন বলুন তো ? তাঁদের খবর আমি কেন রাখবো ? এক মাসের উপর তাঁরা প্লাটফর্মে শুতেও আসে না । এমনকি আমার দোকানেও চা খেতে আসে না । সুতরাং তাঁদের খবর কোথায় পাবো ?
কোথায় গেছে কীভাবে জানা যাবে ।
সেটা আমি কীভাবে বলবো ।
চা খেয়ে ইতাস গোটা প্লাটফর্ম চক্কর দিলো । কোথাও তাঁদের হদিস মিললো না । হতাশ ইতাস । মনে মনে ভাবছে তাকে হতাশ হলে চলবে না । যেভাবে হোক বাবা-মাকে খুঁজে পেতে হবে ।
আসান ও ইমলি প্লাটফর্মে হাজির । তিনজনে মিলে চিন্তিত, তাঁরা কোথায় যেতে পারেন ? সত্যিই তাঁরা রামপুরহাট ছাড়লেন কিনা সেই ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছে না । হঠাৎ আসান বাবাকে বললো, “যেহেতু দাদু-ঠাকুমা প্লাটফর্মে ঘুমাতেন, সুতরাং প্লাটফর্মের অনেকেই তাদের চেনেন । আমরা প্লাটফর্মের মানুষদের সাথে আলাপ করে দেখি কেউ তাঁদের হদিস দিতে পারেন কিনা ?
প্লাটফর্মে একজন বয়স্কা ভিখারির সঙ্গে দেখা । সেই বুড়ি ভিখারি কলাপাতায় ভাত খাচ্ছিলো । ভাতের সাথে কোনো তরকারি নেই । কাঁচা লঙ্কা ও লবন দিয়ে তার ভাত মাখানো । দাদু-ঠাকুমার বিবরণ উল্লেখ করে আসান ভিখারি মাসির কাছে জানতে চাইলো, সে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভিখারিকে চেনে কিনা ? ভিখারি মাসি অপলক দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো । তারপর হাতের ইশারায় বোঝালো, সে কথা বলতে পারে না । তবে তার হাতের ইশারায় এবং চোখের ভঙ্গিমায় যেটা বোঝা গেল, সে তাঁদের চেনে । কিন্তু তাঁরা এখন এই প্লাটফর্মে থাকেন না ।
হতাশ হয়ে ইমলিরা যখন অন্য প্লাটফর্মে খোঁজ নেওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে ভিখারি মাসি ডাকছে আর ছুটছে । কাছে এসে হাঁপিয়ে গেছে ভিখারি মাসি । সে তাদের দুই নম্বর প্লাটফর্মের শেষ মাথায় নিয়ে গেল । কয়েকটি দোকান । চায়ের দোকানের পাশে এক বুড়ির মুড়ির দোকান । তাঁর কাছে গিয়ে হাতের ইশারায় বোঝালো এই দোকানে তাঁরা মুড়ি খেতে আসতো । ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইমলি মুড়ির দোকানের মাসিকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার দোকানে দুইজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কী মুড়ি কিনতে আসতেন ?”
মুড়ি মাসি উত্তরে জানালেন, “দুইজন ভিখারি মুড়ি কিনতে আসতো বটে, কিন্তু তাঁরা এখন আসেন না ।“
কোথায় গেছে আপনি কী জানেন ?
বুড়োর খুব শরীর খারাপ । কাশি কিছুতেই কমছিল না । এখানকার নন্টে হাতুড়ে ডাক্তার বলেছিল তার বুকে সর্দি জমেছে । তাঁর চিকিৎসার জন্য বুড়ি ছটফট করছিল । তারপর থেকে তাঁদের আর দেখা যাচ্ছে না । তবে কথা প্রসঙ্গে বুড়ি ইলামবাজারের হাসপাতালের কথা একদিন বলেছিলেন । সেখানকার এক নার্সের সঙ্গে আলাপ হওয়ায় ইলামবাজারের হাসপাতালে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । এর বেশী তিনি কিছু জানেন না । কিন্তু ভিখারিদের কী দরকার ?
তাঁদের সঙ্গে আগে দেখা হোক, তারপর আপনাকে সব বুঝিয়ে বলবো । রাত অনেক হয়েছে । আমরা ভাবছি, এখনই ইলামবাজার যাব । ইলামবাজার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখি তাঁদের দেখা পাওয়া যায় কিনা ?
তারপর রাত্রি ১২টার পর ইলামবাজারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনজনে হাজির । ইতাস দেখতে পেল, হাসপাতালে ঢোকার মুখে একফালি জায়গায় মা বসে বসেই ঘুমোচ্ছেন । তাঁর পাশে দুটো কুকুর ঘুমোচ্ছে । উল্টোদিকে হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড হাতে লাঠি নিয়ে কাঠের চেয়ারে চোখ বুজে ঝিমুচ্ছে ।
মায়ের করুণ দৃশ্য দেখে ইতাসের চোখে জল !
মায়ের পায়ের কাছে বসে তার কী কান্না !
কান্না শুনে ইতাসের মা চোখ মেলে তাকালেন । এত রাত্রিতে সে কার কান্না শুনতে পাচ্ছে । নিজের পেটের সন্তানের হাসি-কান্না তাঁর মুখস্থ । চোখ রগড়িয়ে ভাবছেন, তবে কী ইতাসের কান্না ! তখনও তিনি ঠাহর করতে পারছেন না । ততক্ষণে সিকিউরিটি গার্ড জেগে গেছেন ।
ইতাসের মা রীতিমতো ধন্দে !
তারপর ইতাসের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে ছলছল চোখে বললেন, “কেডা রে ! তুই কী আমার ইতাস !” তারপর তাঁদের একমাত্র সন্তানের সন্ধান পেয়ে ইতাসের মায়ের কান্না আর থামে না ।
 ( চলবে )