“পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়” – ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আকাশে এক নীরব ঋষি-নক্ষত্র…..

0
2204

কলমে : সৌগত রাণা কবিয়াল:- ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ‘তবলা’, যুক্তাক্ষরী বাংলা ভাষার অমূল্য অঙ্গ যুক্তাক্ষরের মতোই একটি অভিন্ন সুর-অঙ্গ সঙ্গত..! মৃদঙ্গ জাতীয় দুইদিক চামড়ায় ছাওয়া যন্ত্র ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে সৃষ্ট ধ্বনি শুনে আমীর খস্রুর চমৎকৃত অভিব্যাক্তি “তব ভি বোলা” থেকে আজকের সময়ে ‘তবলা’ সমগ্র পৃথিবীতে শিল্পকলা ও সঙ্গীতায়োজনে অনন্যসাধারণ প্রয়োজনীয় এক সুর সঙ্গী…!

বাংলায় শাস্ত্রীয় সংগীতে ‘তবলা’ এর ঐতিহ্য কলকাতার পন্ডিত হিরু গাঙ্গুলী ও পন্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের হাত ধরে পরবর্তীতে পন্ডিত শঙ্কর ঘোষ, পন্ডিত বিক্রম ঘোষ, পন্ডিত অনিন্দ্য চট্রোপাধ্যায়, পন্ডিত কুমার বোস ও পন্ডিত স্বপন চৌধুরী সহ প্রমুখ বাঙালি শিল্পী প্রসিদ্ধ তবলিয়া হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে তোলার পরেও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেন যেন মনে হয়, আজকের প্রজন্মের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রসমূহের প্রতি ভালোবাসাটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়ায়নি ঠিক সেভাবে..!

অথচ দক্ষিণ ভারতীয় সহ সমগ্র ভারতীয় সংস্কৃতির বর্নিল পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় যে, তবলিয়া শিল্পী হিসেবে বাংলাতে অনেক মেধাবী শিল্পী পরবর্তীতে নিজেদের শিল্প-মেধা প্রকাশের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে কৃতি বাদ্যযন্ত্র শিল্পী হয়ে সমাদৃত হলেও, পরের ঘরে খবর রাখতে ব্যাস্ত বাংলার এই সময়ের প্রধান প্রচার মাধ্যমগুলো যেন নিজের ঘরের কৃতি সন্তানদের প্রতি সঠিক বিচার করার ক্ষেত্রে অনেকটাই কৃচ্ছসাধনায় মগ্ন.. !


‘পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়’…
এই সময়ের এমনই একজন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ভারতীয় বাঙালি তবলিয়া, যিনি তার শিল্পের গভীর মাধুর্যকে স্পর্শ করেছিলেন তপস্বী মগ্নতায়..!
অথচ অধুনা বাংলাতে সমাদৃত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সুর-সঙ্গতের এই সময়ের যোগ্য গুরু প্রতিম তবলিয়া শিল্পীগনের তুলনায়, আমাদের আপন ঘরের গুনি সন্তান বাংলার শাস্ত্রীয় সংগীতের এই আলোকিত নক্ষত্র
‘পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়’ কোথায় যেন নীরবে শিল্পের এক মগ্ন পূজারী হয়ে আমাদের সকলের অলক্ষ্যে এ বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৭ই মে তে নিভৃতে চলে গেলেন স্বর্গীয় শূন্যতায়…!
একজন মহর্ষি শিল্পীর মতোই অভিমানের পরিবর্তে তিনি আমাদের জন্য রেখে গেলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের ভান্ডারে তার শিল্পের অসাধারণ আশির্বাদ..!

১৯৪২ সালের ২৮শে এপ্রিলে উত্তর প্রদেশের বানারসে এক সাংস্কৃতিকমনা পরিবারে জন্ম নেয়া পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংস্কৃতিক ভালোবাসায় জড়ানো অনেকটা তার পিতা শ্রী রাধা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে, যিনি তৎকালীন সময়ে বৃটিশ রেলওয়েতে রেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে তার কর্মজীবনের পাশাপাশি একজন অপেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সঙ্গীতকে আপন বৈকুন্ঠে উপভোগ করতেন..! উল্লেখ্য যে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ একসময়ে বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রসিদ্ধ শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী পন্ডিত নীলমণি বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বহরমপুরের রাজা মনিন্দ্র চন্দ্র নন্দীর রাজসভার সভা গায়ক..! এর পূর্বে তিনি মনিপুর রাজদরবারের সভা গায়কও ছিলেন..!

মাত্র নয় বছর বয়সে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন বিখ্যাত বানারাস ঘরানার অন্তর্গত ঠুমরি গায়কীর জন্য প্রসিদ্ধ শিল্পী বানারস ঘরানার গুরু পন্ডিত মহাদেব প্রসাদ মিশ্র(যিনি প্রকৃত অর্থে মেধাবী একজন শাস্ত্রীয় তবলিয়া ছিলেন) এর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম শাস্ত্রীয় তবলিয়া হিসেবে নিজের শিল্প-স্বরস্বতীর উপাসনা শুরু করেন..! উল্লেখ্য যে সেই সময়ে বানারস ঘরানার দুটি প্রসিদ্ধ ধারা ছিলো কবির-চৌরা ও রামপুরা..যদিও সময়ের বিবর্তনে এখন তবলার এই দুটো ধারা মিলেমিশে প্রায় এক হয়ে গেছে..! কিন্তু পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রারম্ভিক হাতে খড়ি হিসেবে পিতা রাধা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন তার প্রথম গুরু…! বিশেষ ভাবে বলতে হয় যে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন বেনারস ঘরানার প্রসিদ্ধ তবলিয়া পন্ডিত আনোখে লাল মিশ্র, পন্ডিত শান্তা প্রসাদ, পন্ডিত কিষাণ মহারাজ এবং পন্ডিত সারদা সাহায় সহ প্রমুখ পন্ডিতদের প্রতক্ষ্য সংস্পর্শে তার তবলিয়া শিল্প বোধ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে..!
পরবর্তীতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অনেক উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদগনদের সাথে আপন শিল্পের অপুর্ব প্রকাশ করার মাধ্যমে, সুর পিয়াসী শ্রোতাদের অসাধারণ ভালোলাগায় পূর্ণ-মোহিত করে রেখে গেলেন পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়…!

শিশুকাল থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাদ্যযন্ত্রতে শব্দ অলংকরণের পারদর্শী পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর পিতা স্বর্গীয় রাধা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তবলার বোলে পুত্রের মননশীলতা টের পেলেন, তখন তিনি তার পুত্রকে গুরু-পন্ডিত মহাদেব প্রসাদ জির কাছে নিজের পুত্রের মেধার ব্যাপারে পরিচয় দিলেন..! শাস্ত্রীয় তবলিয়ায় বাল্য বয়সী এই ছেলেটির অসাধারণ মেধা ও মন-প্রিয়তা দেখে তার আলোকিত ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে তাকে যোগ্য তালিম দিয়ে গড়ে তোলেন সেই সময়ের এই মেধাবী পন্ডিত তবলিয়া..! পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় শৈশব থেকেই পন্ডিত মহাদেব প্রসাদ জি’র ‘গন্ডা-বাঁধ’ শিষ্য ছিলেন..!

ছেলেবেলা থেকেই তার সংগীতের সুর-অঙ্গ ‘তবলা’ এর প্রতি অসীম একাগ্রতা ও ভালোবাসা তাকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসের একজন সফল সম্বৃদ্ধ তবলিয়া শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলে…!

বিশ্ব সঙ্গীতের ধারায় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, রাগ প্রধান বিশিষ্ট প্রকৃতির প্রকাশ নির্ভর একটি সুক্ষ্ম সুর প্রয়াস.. প্রাচীণ ভারতের পৌরাণিক ইতিহাসে যা কিনা সৃষ্টির বৈচিত্র্য মন্থনী সুর-ধ্বনি হিসেবে সঙ্গীতের জগতের সবচাইতে শুদ্ধ ও অনুভূতিশীলতায় পূর্ণ সম্বৃদ্ধ একটি ধারা, যা সমগ্র পৃথিবীর ভৌগোলিক সংস্কৃতির মধ্যে উচ্চমার্গীয় একটি শিল্প হিসেবে পরিচিত..! তাই এর প্রকাশ-কালে এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয় শিল্পীগন ও শ্রোতাদের মধ্যে…! সম্পুর্ণ বৈঠকি মেজাজী এই শিল্পের পরিপূর্ণ প্রকাশে গায়ক ও সঙ্গত শিল্পীদের একাগ্র মগ্নতার বিশেষ প্রয়োজন হয়..! আর সেই প্রেক্ষাপটে শাস্ত্রীয় ঘরানার এই শিল্পের মূল্যায়নের যায়গাটাও অত্যান্ত সন্মানের সাথে দেখা হয়ে থাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণে..! ‘পণ্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়’ এর শিল্প প্রকাশের ক্ষেত্রেও এমটাই পরিপূর্ণ প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে নিভৃতচারী এই ক্ষণজন্মা তবলিয়া শিল্পী বর্তমান সময়ের একজন প্রসিদ্ধ গুরু হিসেবেও শাস্ত্রীয় সংগীতে আগ্রহী নব প্রজন্মের কাছে পরম পূজনীয় হয়ে উঠেছিলেন…!

যৌবনের প্রারম্ভে মাত্র আঠারো বছর বয়সে পণ্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রতিযোগিতায় তবলাতে প্রথম পুরস্কার জিতেছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন..! পরবর্তীতে তিনি ছিলেন অল ইন্ডিয়া বেতার ও দূরদর্শনের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ স্থানীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও তবলিয়া শিল্পী এবং সেখানকার অডিশন বোর্ড কমিটির একজন সন্মানিত সদস্য..! তিনি ছিলেন একজন সফল এককবাদক তবলিয়া ও শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী…!

তিনি বর্তমান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাঙ্গনের বিশ্বখ্যাত সকল নক্ষত্রগন তথা- পন্ডিত কুমার গান্ধর্ব, পন্ডিত মল্লিকার্জুন মনসুর, পন্ডিত রবি শংকর, ওস্তাদ ভিলায়াত খান, ওস্তাদ আলী আকবর খান, ওস্তাদ আমজাদ আলী খান, পন্ডিত যশরাজ, বিদূষী কিশোরী আমনকার, পন্ডিত ভীমসেন জোশি সহ আরও অনেক গুনি শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পীর সাথে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন..! আমাদের সৌভাগ্য যে একজন প্রবাসী বাঙালি হিসেবে বেড়ে উঠেও আজ বাংলার একজন কৃতি সন্তান হিসেবে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য তার শিল্প প্রকাশের রেকর্ডের অসংখ্য ক্যাসেট, অ্যালবাম এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের সিডি রেখে গেছেন, যা কিনা আগামীতে বাংলা তথা ভারত সহ সমগ্র পৃথিবীতে শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসে যন্ত্রানুসঙ্গের অমূল্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে..! কৃতি এই শিল্পী তার সময়কালে একজন প্রসিদ্ধ শাস্ত্রীয় তবলিয়া শিল্পী হিসেবে বার্লিনের বিশ্ব যুব উৎসব, মেরিল্যান্ডের ভারতীয় সাংস্কৃতিক উৎসব এবং বোস্টন, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রান্সিসকো সহ সমগ্র পৃথিবীর বিশ্ব-সংস্কৃতিতে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন গুনি ও সম্বৃদ্ধ শিল্পী হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন..! তার শিল্প প্রকাশের স্বীকৃতি স্বরুপ ইথিওপিয়ার সম্রাট তাকে স্বর্ণপদক প্রদানের মাধ্যমে সন্মানিত করেন.. যা কিনা সে দেশে বিদেশী সংগীতশিল্পীদের জন্য একটি বিরল সম্মান হিসেবে পরিচিত ..! যদিও দূর্ভাগ্যবজনকভাবে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননার যোগ্য অধিকারী শিল্পী হওয়া সত্বেও নিজ ভূমি থেকে সেই প্রাপ্য সন্মান থেকে বঞ্চিত ছিলেন..! কিন্তু প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় কখনই স্বীকৃতি নামক সোনার হরিণের জন্য মোহগ্রস্ত ছিলেন না.. তিনি তার শিল্পকে সাধনার উচ্চতর স্তরে পৌঁছাতে শাস্ত্রীয় সংগীতের ধারায় পরম মগ্নতায় কাজ করে গেছেন..যা কিনা একজন প্রকৃত শিল্পীর মননশীলতার শ্রেষ্ঠ ধরন হিসেবে যুগ যুগ ধরে পূজ্য হয়ে এসেছে…!

এছাড়া ক্ষন জন্মা এই প্রতিভাবান শিল্পী একজন সাংস্কৃতিক বোদ্ধা হিসেবে তার মেধার স্বাক্ষর রেখে যাওয়ার পাশাপাশি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও চারুকলা অনুষদে গান ও নাটক বিভাগে, আমেরিকার চিকাগোতে আমির খুসরো সোসাইটিতে একজন পরামর্শক ও প্রশিক্ষক হিসেবে তার মেধার প্রজন্ম বুনন করেন..! আইটিসির সংগীত গবেষণা একাডেমির প্রথম নির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পন্ডিত বিজয় কিচলুর আমন্ত্রণে এই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ১৯৭৯ সালে স্থায়ী ভাবে কলকাতার নিবাসী হোন..! পরবর্তীতে কলকাতার অনেক মর্যাদাপূর্ণ সংস্থার সাথে সন্মানিত পদাধিকারী হয়ে সে সব যায়গায় তার সার্থক শিল্প স্বাক্ষর রেখে গেছেন….!

সঙ্গীত জীবনে আজীবন অবদান ও অর্জনের জন্য ২০১৯ সালে প্রাচীন কালা কেন্দ্র থেকে তিনি তৎকালীন পশ্চিম বাংলার রাজ্যপাল শ্রী কেশরী নাথ ত্রিপাঠী মহাশয়ের হাত থেকে গুরু এম এল কোসার সম্মাননা পুরুস্কার এবং ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন..! উল্লেখ্য যে ২০১২ সালে তিনি সল্টলেক মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন কতৃক সঙ্গীত রত্ন পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন..!


পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় তার সম্বৃদ্ধ শিল্প প্রকাশ আমাদের জন্য রেখে যাওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় শাস্ত্রীয় ঘরানার শিল্পে এই সময়ের অনেক প্রতিভাবান শিষ্যকে যোগ্য তালিম দিয়ে গেছেন.., যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন তার সুযোগ্যা কন্যা হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় ও আধা শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী কস্তুরি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় তবলিয়া হিসেবে তার সুযোগ্য পুত্র শ্রী প্রাণ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়..!
পিতা-কন্যা ও পিতা-পুত্রের অসাধারণ সুন্দর সব যুগলবন্দী ইতিমধ্যে ভারত সহ সমগ্র পৃথিবীর শাস্ত্রীয় সংগীত প্রেমিদের মনে ভালোলাগার যায়গা করে নিয়েছে..!
বানারস ঘরানার সূক্ষ বাজ, আর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর-সঙ্গত তবলিয়া হিসেবে শ্রী প্রাণ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে তার নিজস্বতায় গুনিজনদের আশির্বাদ ধন্য হয়েছেন..!
তার সুযোগ্যা কন্যা কস্তুরি বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে আপন মেধায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে উঠেছেন একজন হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় ও আধা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সম্বৃদ্ধ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে..!
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামাতা এই প্রজন্মের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সেতার বাদক শ্রী সুপ্রতীক সেনগুপ্ত মহাশয় বর্তমানে ভারতীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন উজ্জ্বলতম মুখ…!
উল্লেখ্য যে শিল্পীর পারিবারিক সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের ঐতিহ্যগত ধারাবাহিকতায় পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার পুত্র প্রাণ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও কন্যা কস্তুরি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শুদ্ধস্বর আর সুরের আরাধনায় সবসময় অনুপ্রেরণা হয়ে তাদের পাশে থেকেছেন স্বর্গীয় পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহধর্মিণী ও শ্রী প্রাণ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাতা শ্রীমতী রেখা বন্দ্যোপাধ্যায়…!

আজকের এই অস্থির প্রতিযোগিতার সময়ে যেখানে পারিবারিক বন্ধন বিলুপ্তির পথে সেখানে পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু তার শিল্প নয়, তার জীবনধারার মাধ্যমেও আমাদের কাছে যোগ্য পারিবারিক বন্ধনের অসাধারণ উপমা রেখে গেছেন..!

বিশ্বের প্রাচীনতম সঙ্গীত ঐতিহ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের উজ্জ্বল প্রকাশ ও সঠিক ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এর সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য স্বর্গীয় পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, এক সময়ের সাংস্কৃতিক কলাকুশলীদের আতুর ঘর বলে পরিচিত এই বাংলায় আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন চিরকাল..!
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মতো শিল্পের উৎকর্ষতম এই যায়গায় পন্ডিত আনন্দ গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের শৈল্পিক সৃষ্টির অসামান্য প্রকাশের মাধ্যমে যুগের পর যুগ ভারতীয় তথা বিশ্ব সংস্কৃতিতে শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসে একজন সম্বৃদ্ধ শিল্পী হিসেবে আমাদের ভারতীয় বাঙালি সংস্কৃতিতে আলোকিত অনুপ্রেরণা ও সারা বিশ্বে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন আলোক উজ্জ্বল মানুষ হিসেবে সমাদৃত থাকবেন..!

সকল সাংস্কৃতিক-কলা প্রিয় মানুষের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই মহান ক্ষনজন্মা প্রতিভাবান শিল্পীকে..! আপনার কর্ম ও আশির্বাদ আমাদের সাংস্কৃতিক বোধকে পবিত্র করে তুলুক..!

জয় হোক শুদ্ধ শিল্পের..!

—সৌগত রাণা কবিয়াল
( কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক )

বিঃদ্রঃ- ( এই লেখাটির সত্ত্বাধিকারী ‘সব খবর’ দ্বারা সংরক্ষিত এবং এর কোন অংশ প্রতিলিপিকরণ লেখক ও সব খবরের অনুমতি সাপেক্ষ )