হৃদ মাঝারে : শতাব্দী মজুমদার।

0
462

ঘুম না আসা রাতগুলোতে জানালা দিয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যায় সেদিকে তাকিয়ে থাকে মহুয়া। গভীর রাতে অয়নও আকাশ দেখে,সেই মুহূর্তে ওদের কলকাতা আর দিল্লীর আকাশ মিলেমিশে যায় একসাথে।

“দেখো,একদিন তুমি শিখরে পৌঁছে যাবে”।
মহুয়া শিখর ছুঁয়েছে , নামজাদা টিভি জার্নালিস্ট সে। নিজের ড্রয়িং রূমে বসে তার খবরের বিশ্লেষণ দেখতে ও শুনতে শুনতে অয়ন মনে মনে গর্বিত হয়ে ওঠে।

মহুয়াকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছে অয়ন।ও তখন কলকাতার একটি নিউজ চ্যানেলের
চিফ এডিটর,মহুয়া রিপোর্টার হিসেবে জয়েন করেছিল।

অয়নের শান্ত অথচ কঠিন ব্যক্তিত্ব ,কাজ আদায় করে নেওয়ার কৌশল সব মিলিয়ে শ্রদ্ধা মেশানো ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল মহুয়ার মনে।মহুয়ার থেকে বয়সে সামান্য বড় অয়ন, বসের থেকে বন্ধুই হয়ে উঠেছিল বেশি।ছটফটে চঞ্চল মেয়েটি হঠাৎ শান্ত হয়ে গিয়েছিল।আসলে সে প্রেমে পড়েছে স্মার্ট ঝকঝকে তরুণ অয়নের ,যে তাকে বুঝতে পারে যার কাছে মহুয়া নিজের মন কে মেলে ধরতে পারে।

অয়নের যদিও স্টেডি গার্লফ্রেন্ড ছিল তাই আর কোনো সম্পর্কে সে জড়াতে পারবে না স্পষ্ট জানিয়ে, দুম করে চাকরি ছেড়ে দিল্লির একটি ইংরেজি দৈনিকের অফিসে জয়েন করেছিল ।

ধাপে ধাপে মহুয়া তার প্রফেশনে উন্নতি করেছে কিন্তু ব্যক্তিজীবনে সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে।অয়নকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে ভাবতে পারেনি।

অয়ন তার সেই গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে সেটল হতে পারেনি, সম্পর্ক ভেঙে গেছে।একলা জীবন অয়নের, মহুয়ার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করার যন্ত্রনা তার আছে।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি আর মহুয়ার চোখের জলে একাকার হয়েছিল সেদিনের অফিসের প্রায় ফাঁকা ক্যান্টিন। সত্যি টা বলতে খুব কষ্ট হয়েছিল অয়নের কিন্তু উপায় তো আর কিছু ছিল না।

মহুয়া কি অন্য সম্পর্কে আছে!থাকতেই পারে,অনেক সময় এই কথা মনে এসেছে।এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা কমন বন্ধুদের কাছ থেকে বা ফেসবুক স্টেটাসে যদিও মহুয়ার ব্যক্তিগত বিষয়ের তথ্য সেভাবে মেলেনি।

একবার কি মহুয়াকে ফোন করবে!

যদি আগেই মহুয়ার সঙ্গে দেখা হতো তাহলে হয়তো তার জীবনটা পাল্টে যেত।না , কখনো ফোন করবে না মহুয়াকে।মহুয়ার জীবনে নতুন করে গিয়ে আর বিড়ম্বনা বাড়াবে না সে।

মহুয়ার ভীষন জানতে ইচ্ছে করে, কেমন আছে অয়ন!

অয়নের সব রিপোর্টিং পড়ে মহুয়া। ফেসবুক খুলে মাঝে মাঝে অয়নের স্ট্যাটাস দেখে, না ওরা কেউ কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়নি।অয়ন যে আছে কোথাও না কোথাও এটা ভেবেই শান্তি পায় মহুয়া।মনে মনে প্রার্থনা করে অয়ন খুব ভালো থাক তার নিজের জীবনে।

………………………….

ব্যাঙ্গালোরে প্রেস কনফারেন্স,দশ বছর পর দেখা হয়ে গেল প্রায় মধ্য বয়স্ক অয়ন মহুয়ার।
কথা হলো কিন্তু কেউ যেন সহজ হতে পারলো না।
আসলে ওরা ওদের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আর
এলোই না,উঠলো না বিয়ে থা,ঘর সংসারের কথা।
মহুয়া ভেবেই নিয়েছিল অয়ন তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে সেটেল্ড আর অয়ন ভেবেছিল মহুয়ার বর বাচ্চা অথবা বয়ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই আছেই।

আবারও হারিয়ে ফেললো দুজন দুজনকে, দুজন দুজনের শুভাকাঙ্খী হয়ে দূরত্বে থাকলেও ওদের মন কিন্তু থেকে গেল মনেরই পাশে।

সমাপ্ত