অনেক দিনের পড়ে তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবতে পারি নাই । তবে বিশ্বাস ছিল এই গোল পৃথিবীতে, তুমি আমি বেঁচে থাকলে অবশ্যই দেখা হবে। তবে কেমন করে,এমনভাবে দেখা হবে,সেটা ভাবনাতেই ছিল না!
আজো সেদিনের সেই তোমার আমার স্মৃতি ভীষণ স্পষ্ট! সেই ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি, পরিচয় পর্ব,মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা।চোখে চোখ রেখে,চোখ ফেরাতে না পারা!মন দেওয়া নেওয়া, মনের কথা বুঝতে শেখা! প্রাণের স্পন্দনের নতুন নতুন শিহরণে কেঁপে ওঠা!কখনো কখনো লজ্জায় মরি! মরি! ভালোলাগার ভালোবাসাতে মরে যেতে ইচ্ছে করা।আরো কত-শত কিশোরী ভাবনাতে ডুব সাঁতারে অনুভূতির মণি-মুক্তা খোঁজা। অচেনা ভালোলাগাতে অযথা অবিরত হেসে হেসে কান্না করা!অনক কিছুই বলতে চেয়েোও বলতে না পারা।অযথা মন চঞ্চল হরিণী হওয়া।।ঠিক যেন নতুন অনুভূতির রাজত্বের সন্ধান পাওয়া!
এরপর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, লুকিয়ে চুরিয়ে হাতেধরে হাঁটা।অনেক সময়ে মিলিয়ে পোশাক পরা।দেখা না হলেই অস্থির মনে পত্র লেখা।দেখা হলেই একসাথে বসে বাবুই পাখির গল্প বলে, নিজেদের স্বপ্নসুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা। দু’জন মিলে বৃষ্টিতে ভেজা। নদীর বুকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে গিয়ে জলের বুকের কলকল শব্দ শোনা।
কখনো মেঘের সাথে রৌদ্রের লুকোচুরির গোল্লাছুট খেলায় তোমাকে স্পর্শ করা।তারপর! তারপর বনফুল আর পাখিদের কিচিরমিচির শব্দকে সাক্ষী রেখে, কেউ কাউকে ছেড়ে না যাওয়ার শপথের মন্ত্র উচ্চারণ করা।সেদিন থেকে নিজদের বড় বড় ভাবতে শেখার ভালোলাগাতে আনন্দে আত্মহারা ছিলাম দুজনেই।
যা আজ মধ্য বয়সেও ভকবতে গেলে মন কেমন করে।তোলপাড় করা নিশ্বাসের শব্দে তীর ভাংচুরের শব্দে, আজো মন চমকে ওঠে।
সেদিনের সেই বিকেলর হঠাৎ ঝরে পড়া রিমঝিম বৃষ্টিতে তোমার হাতধরে হাঁটছিলাম!আজকেও শেষ বিকেলের হঠাৎ আাসা রিমঝিম বৃষ্টিতে,সেই আমি আজ, ইচ্ছে মনেই ভিজছি। তবে আজ তুমি ছাড়া, আমি একা।
আজ শেষ বিকেলের হঠাৎ ইচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে তোমাকে এমন ভাবে দেখতে পাব, সত্যি সত্যিই ভাবি নাই। আজ তোমার সাথে অনেকেই রিমঝিম বৃষ্টিতে ইচ্ছে মনে ভিজছে।তুুমি, তোমার,আর তাহারা সবাই মিলে খুশির বৃষ্টিতে ভিজে মনে হাসছো।
তোমাকে দেখে আজ মনে হলো, তুমি খুব সুখেই আছো।জানো সত্যি বলতে তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগপর্যন্ত তোমাকে ভেবেই, তোমাকে সাথে নিয়ে, তোমার সাথে সাথে কত
রাজত্বের গল্পমনে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম।
সেই তুমি সেদিন না বলে, এমন ভাবে, কেমন করে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে? এতোগুলো বছর ধরে জনে জনে জানিয়ে, তোমাকে কত খুঁজেছি।তোমার দেওয়া আমার জানা, সব ঠিকানায তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তোমার কোন খোঁজ পায়নি।
জানো গত কাল অবধিও তোমাকে খুঁজেছিলাম।তোমাকে ভাবতে গিয়ে কত আপনজন পর করে দিয়ে , তোমার স্মৃতি সাথীকরে, জীবনের পথচলা খুব সহজ ছিল না।কত স্ট্রাগল, কত কানাঘুষা, নিজ পরিবারের সাথে যুদ্ধ করা।সব শেষে সবাইকে ছেড়ে, শুধুমাত্র তোমার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে স্হায়ী ভাবে বসবাসের স্বাধীনতা অর্জন করা।মিথ্যা বলব না তোমার স্মৃতিকে নিয়ে দিব্যি দুজনে মিলে এতোদিন ভালোই ছিলাম!
স্মৃতির গল্পে মাঝে মাঝে অবাক মনে, তোমায় প্রশ্ন করেছি, আমাকে না বলে তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে?এতো বছরেও আমার কোন খোঁজ করলে না।তুমি তো কতবার আমাদের বাড়িতে এসেছো।তাই বাড়ির ঠিকানা তোমার অজানা নয়।কিন্তু এই আমি তোমার গল্পে শোনা গ্রামের নাম “রূপনগর” আর তোমার নাম “রাজা” এবং চেহারার বিবরণ দিয়েও কত খুঁজেছি।এইতো গত কালকেও অফিসের নতুন জয়েন করা কলিগের সাথে পরিচয় হতেই তার গ্রামের বাড়ি ” রূপনগর ” নামনশোনা মাত্রই,চঞ্চল আমি, তাই আমার জানা, তোমার সবটুকু বিবরণ দিলাম
তোমার এস,এস,সি,র সাল আরো কত শত কত কত। কিন্তু সেও তোমার মত দেখতে অতীতের কাউকেই চিনতে ও খোঁজ দিতে পারলো না।
তবে আজ তোমাকে দেখার পরে প্রথমবারের মত মনে হল, তুমি হারিয়ে যাও নাই, তুমি ইচ্ছা করেই সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলে।আজ মনে হচ্ছে তুমি তোমার সত্যি ঠিকানাট আমায় দাও নাই।খুব সুন্দর করে সেদিন, তুমি আমায় মিথ্যা বলেছিলে।সরল মনে তোমাকে সত্যি সত্যিই সত্যি ভেবেছিলাম।
আজ এতো বছরের বিশ্বাস ভেঙে দিলে। নতুন করে আরো একবার কষ্ট দিলে! তুমি মিথ্যুক!আর এই আমি তোমাকে ভেবে, বহু বছরের খুব কষ্ট করে পাড়ি দেওয়া, এতোটা পথের চলা, আজ এখানেই কত সহজেই, তুমি থামিয়ে দিলে।
জান তোমাকে এতে বছরে খুঁজে না পেয়ে ভেবেছিলাম তুমি হয়ত কোন এক্সিডেন্টে হারিয়ে গেছো। কখনো মুখে উচ্চারণ করি নাই তুমি মারা গেছ।
তবে যেভাবেই হোক না কেন, আজকের পর থেকে আর তোমাকে খুঁজতে হবে না।
তুমি তোমার অপেক্ষা থেকে মুক্তি দিলে আমায়! জান সত্যি বলতে আমি কখনোই তোমার কাছ থেকে এমন মুক্তি চাই নাই।
অনেক কথা ভাবতে ভাবতেই, তুমি আর তোমাদের দলটা, আমায় পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে, এগিয়ে যেতেই ভাঙ্গা মনটাকে শাসনের সান্ত্বনা খুঁজতে অবাধ্য হয়ে ওঠি।মন বলে হয়ত তুমি আমায় দেখ নাই, বা চিনতে পারো নাই।তাই তোমাকরে চেনাতে আমাকে পুনরায় দেখাতে একটু ছল করে ছলনা করলাম।তাই মোর ঘোরাপথে ঘুরে গিয়ে , সামনে দাঁড়িয়ে, মিথ্যাকরে হোঁচট খাওয়ার নাটক করে, ইচ্ছে করেই হাতের মোবাইল ফোনটা তোমার পায়ের উপর ফেলে দিয়ে, তোমাকে থামিয়ে দিলমা। Sorry বলতেই, তুমি না ঠিক আছে বলেই, ফোন হাতে তুলে দিলে।আমি Thanks জানালাম।
তুমি আমার কন্ঠ শুনেও একটুও চমকালে না। বেহায়া মন বলে শেষবার চেষ্টা করি।তাই গায়ে পড়ে বললাম, আমি এই আবাসিকেই থাকি H Blok ! বাড়ির নাম আমার নামের নাম রেখেছি ” নার্গিস’ !
চোখে চোখ পড়তেই তুমি খুব অবজ্ঞার চোখে তাকিয়ে বললে, তাই! সুন্দর নাম!কত সহজেই চোখের ভাষা দিয়ে, জীবনের সব হিসাব চুকিয়ে দিলে অচেনা করে।
তবুও বলি আপনারা কোন ব্লকে থাকেন? তোমার পাশে থাকা তোমার, তুমি নামক মহিলা বলে উঠলেন, আপনার পাশের ব্লকেই থাকি অনেক বছর হল।আপনাকে বেশ কয়েকবার শেষ বিকেলের হাঁটাপথে দেখেছি।
তুমি, তোমার তুমিদের সাথে নিয়ে অবহেলার হাসি হেসে, আয়েসি কাশি কেশে শখের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে, সামনের পথধরে চলে গেলে।
শেষ ইচ্ছার লোভী আমি দাঁড়িয়ে দেখি, যদি ভুল করে পিছু ফিরে তাকাও।তবু্ও বা কম কিসের হবে, জীবনের শেষ বিকেলের গল্পের।
পড়ন্ত জীবনকে টেনে চলার অবিরাম ছুটে চলা ট্রেনের হুইসলের শব্দের মত একটা প্লাটফর্মের, মিথ্যা স্বপ্ন দেখা অবলম্বন হোক।
আমায় না চিনলেও তুমি চেনা নারগিস নাম ভেবেও আর পিছন ফিরে তাকাও নাই।যাক মিটে গেলো এতো বছরের সব অপেক্ষার হিসেবনিকেশ! বিরবির করে মন আজ নিজেকে বলে, এমন তো কথা ছিল না?সেদিনের শপথ, স্বপ্ন, নার্গিসকে নিয়ে যত কথা,কবিতা সবই ছল ছিল?
হা-হা- আর আমি যৌবনের ভুলে ভরা ভাবনাতে বিবর্ণ ৪০টা বসন্ত পার করে দিয়েছি, আজকের লম্পট ভ্রমরকে ভেবে ভেবে।
আজ জীবন গল্পের মধ্য দুপুরে চেহারায় বলিরেখা আঁকিবুঁকির ছবি আঁকে, ফেলা আসা দিনের।
জীবন শেষ বিকেলের ভুলের অবেলায় দাঁড়িয়ে মন বলে, আজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আবার জীবন যুদ্ধ।
তবুও বলি তোকে, আজও ভাবনার সেই তোকেই ভালোবাসি।
নিশ্চয়ই আজকের কোন তোকে নয়! তবে আজ নতুন যুদ্ধে, জীবন কাঁদে জীবনের জন্য! জীবন আজ জীবনকে কেঁদে বলে, আহারে জীবন! আহা জীবন আমার।।