পুরভোটে পৃথক রাজ্য ইস্যুতে তীব্র লড়াই কোচবিহারে, মালতির পা ভাঙতে চাওয়ার অভিযোগ তুলে উদয়নের বিরুদ্ধে মামলা বিজেপির।

0
399

কোচবিহার, ২০ ফেব্রুয়ারিঃ পৃথক রাজ্যের দাবি ইস্যুতে দলীয় বিধায়ক মালতি রাভার হাঁটু ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ জানাল বিজেপি। গতকাল রাতে বিজেপি নেতৃত্ব কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ জানান। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে দিনহাটায় উদয়ন গুহের বাড়ির সামনে গিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। স্বাভাবিক ভাবেই পুরো ভোটে মুখে কোচবিহারে পৃথক রাজ্যের দাবির ইস্যুকে কেন্দ্র করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপির মধ্যে লড়াই চরম আকার নিয়েছে।
সম্প্রতি চিলা রায়ের জন্ম উৎসব উপলক্ষে কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের বানেশ্বর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় অনন্ত রায়(মহারাজ) নেতৃত্বাধীন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দুপুরের দিকে অনন্ত মহারাজের আমন্ত্রণে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। তেমনি মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করাও ওই সভায় গিয়েছিলেন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক মালতি রাভা পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন। এরপরেই মালতি রাভার বিধানসভা কেন্দ্র তুফানগঞ্জে পুরসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ গ্রেটারের সভায় বিজেপি বিধায়িকার পৃথক রাজ্যের দাবির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তীব্র ভাবে আক্রমণ করেন। একটি বহুল প্রচলিত গানের কথার সাথে মিলিয়ে উদয়ন গুহ বলেন, “তোমরা দেখ গো আসিয়ে মালতি রাভা নিত্য করেন থমকিয়া থমকিয়া।” এরপরেই উদয়ন বাবু হুমকি দিয়ে বলেন, “যারা কোচবিহার জেলার কোথাও পৃথক রাজ্যের দাবি তুলবেন, তাঁদের হাঁটু নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে না।”
এরপরেই উদয়ন বাবুর ওই বক্তব্য নিয়ে জেলা জুড়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। বিজেপি বিধায়িকা মালতি রাভা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন উদয়ন গুহকে। সেখানেই থেমে থাকে নি বিজেপি নেতৃত্ব। গতকাল রাতে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে লিখিত ভাবে উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরও করেছে। বিজেপির এক নেত্রীর কথায়, “ যে সভায় পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন আমাদের বিধায়িকা। সেই সভাতেই গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজের ডাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। অনন্ত মহারাজও আলাদা উত্তরবঙ্গ বা আলাদা কোচবিহার রাজ্যের দাবি দীর্ঘ সময় ধরে করে আসছেন। তাই আমরা মনে করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও কোন না কোন ভাবে এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের আম জনতাও পৃথক রাজ্যের দাবি করে আসছে। উদয়ন বাবু কত জনের পা ভাঙবেন। আমরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলছি প্রয়োজনে উদয়ন বাবুর বাড়ির সামনে গিয়ে মিছিল করবো, দেখি উনি আমাদের পা ভেঙ্গে দেখাক।”
লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে পৃথক রাজ্যের দাবি অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে কোচবিহার সহ সংলগ্ন বেশ কিছু জেলার রাজনীতিতে। ওই সময় এই এলাকার সংখ্যাধিক রাজবংশী সমাজের ভোট নিজেদের বাক্সে টানতে অনেক রাজনৈতিক দলকেই পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানাতে দেখা যায়। ২০১৯ এর লোকসভা এবং ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকায় বিজেপি ওই দাবির সমর্থন জানিয়ে ব্যাপক সুবিধা নিয়েছে। এবার পুরসভা নির্বাচনের মুখে ফের বিজেপি নেত্রী পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে ধরায় লুফে নিয়েছেন তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ। কারণ রাজনৈতিক মহলের ধারনা শহরাঞ্চলে মূলত অরাজবংশী ভোটের সংখ্যা বেশী। যারা পৃথক রাজ্যের দাবিকে কখনই সমর্থন জানান না। সেই কারণেই উদয়ন বাবু মালতি রাভার বক্তব্যকে পুর ভোটে ফয়দা নিতেই লুফে নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। উদয়ন বাবু নিজেও তুফানগঞ্জের ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, “এখানে থাকবেন, আর পৃথক রাজ্যের দাবি তুলবেন, এটা হতে পারে না। কারণ আপনাদের দেখে আমার হচ্ছে এই ওয়ার্ডের বেশীর ভাগ মানুষই ভাটিয়া সম্প্রদায়ের। যারা এক সময় দেশ ভাগের কারণে ভিটেমাটি হারা এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।” কিন্তু এই ভেদাভেদের রাজনীতিও শহরের মানুষের পছন্দের নয়। আর তাই এই ইস্যুতে ভোটে শেষ পর্যন্ত কে সুবিধা নেয়, সেটাই দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here