পরিত্যক্ত জলাশয়ে জিওল ও মাগুর মাছ চাষ করে লাভবান হন।

0
259

দেশে ক্রমাগতভাবে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে অথচ সে অনুপাতে আমিষের উৎপাদন হচ্ছে না। তাই স্বল্প পরিসরে এ দেশের প্রতিটি জলাশয়কে মাছ চাষের উপযোগী করে বৈজ্ঞানিকভিত্তিতে মাছ চাষের ব্যবস্থা নিতে হবে। এর ফলে পরিত্যক্ত জলাশয়সমূহে জিওল ও মাগুর মাছের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। এতে আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে চাষিরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এ ব্যবস্থার ফলে লুপ্ত-প্রায় প্রাকৃতিক মৎস্য সংরক্ষণ, আর্থিক লাভ এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

যে সকল মৌসুমী পুকুর, থপার্শ্বস্থ ডোবা, জলাধার ও বরোপিট সংষ্কার করা হয়ে উঠে না এবং যে জলাশয়গুলোর তলদেশে প্রচুর কাদা থাকে অর্থাৎ অর্থাভাবে এ জাতীয় জলাশয়গুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো ফেলে না রেখে কৈ, জিওল ও মাগুর মাছ চাষ করলে অল্প সময়ে যথেষ্ট ফলন হয় এবং তা বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হওয়া যায়। মাত্র ৩-৪ ফুট গভীর জলাশয়ে ৫-৮ মাস এ জাতীয় মাছ চাষ করে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়।

জলাশয় পরিত্যক্ত থাকলে সেখানে নানা প্রকার জলজ আগাছা জন্মায়। পচন প্রক্রিয়ার কারণে এসকল জলাশয়ে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে না। কিন্তু জিওল ও মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বসনাঙ্গ থাকার জন্য জল ছাড়াও এরা বাতাস হতে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।
পরিত্যক্ত জলাশয়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যায়।
জলাশয়ের জল শুকিয়ে গিয়ে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হলেও ভেজা মাটির ছোট ছোট গর্তে জিওল ও মাগুর মাছ আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকে।
জলাশয় থেকে জিওল-মাগুর মাছ আহরণ করার পরও দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকে। যে জন্য জীবন্ত অবস্থায় তা বাজারজাত করা যায় এবং ক্রেতারা তা কয়েক দিন জলের মধ্যে জীবিত রেখে টাটকা অবস্থায় খেতে পারেন।
এসব মাছে প্রাণীজ আমিষের পরিমাণ বেশী থাকায় ভোক্তারা প্রয়োজনীয় আমিষ পেতে সক্ষম হন।
পোনা-প্রাপ্তি সহজ হয়।

চাষ ব্যবস্থাপনায় খরচ কম।

পরিত্যক্ত মৌসুমী পুকুর, বরোপিট, পথিপাশর্বস্থ ডোবা ও জলাধারে এ মাছ চাষ করা সহজ।

পোনা-প্রাপ্তি ও অবমুক্তি।

বর্ষা মৌসুমে সাধারণতঃ বিভিন্ন প্রজাতির জিওল ও মাগুর মাছ ডোবা, নালা, হাওড়-বাওড় ছাড়াও ধানের ক্ষেতে সঞ্চিত জলতে ডিম পাড়ে এবং এ সকল জলাশয় থেকে পোনা পাওয়া যায়। তখন এ সকল স্থান হতে বা বাজারে চারা পোনা উঠলে সেখান থেকে সংগ্রহ করা যায়। সাধারণতঃ ৪-৫ সেন্টিমিটার মাপের জিওলের পোনা প্রতি বর্গ মিটার জলাশয়ে ৬০-৮০টি ছাড়া যেতে পারে। ৫-৮ সেন্টিমিটার মাপের মাগুরের পোনা প্রতি বর্গমিটার জলাশয়ে ৫০-৭৫টি ছাড়া যায়।

খাদ্য সরবরাহ।

জলাশয়ের তলদেশের কাদা-পাঁক জিওল ও মাগুর মাছের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারে না। অধিকন্তু ঐ কাদায় যে কেঁচো, শামুক এবং কীট-পতঙ্গের বাচ্চা থাকে তা জিওল-মাগুর মাছ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তবে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি পোনার মোট ওজনের শতকরা ৩-৫% হারে পরিপূরক খাদ্য প্রতিদিন প্রদান করলে মাছের উৎপাদন বাড়ে। তাই, হিসেব অনুযায়ী মোট পরিপূরক খাদ্যের মধ্যে কুঁড়া ৪০% সরিষার খৈল ২০% শুটকি বা শামুকের চূর্ণ ১০% হাঁস-মুরগির নাড়ি-ভুঁড়ি ২০% এবং হাড়ের চূর্ণ বা পশুর রক্ত ১০% একত্রে মিশিয়ে সামান্য জল দিয়ে ছোট ছোট বল তৈরী করে জলাশয়ের ৪-৫টি স্থানে (জলার পাড়ের অনতিদূরে) জলর মধ্যে নিক্ষেপ করে অথবা ট্রে-তে করে দেড় ফুট জলর নীচে ডুবিয়ে খাদ্য প্রদান করা যায়।

।।সংগৃহীত।।