তৃণ্ময় বেরা, ঝাড়গ্রাম: দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পুরভোটে বিজেপির বিপর্যয় বলে মানছেন গেরুয়া শিবিরের একাংশ। পুরভোটের আগে বিজেপির জেলা কমিটির গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট। তাই পঞ্চায়েতের আগে আগে নেতৃত্ব বদলের দাবি উঠেছে দলের অন্দরেই। দলেরই অনেকে জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করছেন। জেলা বিজেপির এক নেতা বলেছন, ‘‘সংগঠনে পরিবর্তন না হলে এই জেলায় বিজেপি আরও মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই পঞ্চায়েতের আগে সংগঠন পরিবর্তন দরকার।’’ বিজেপির শহরের এক ওয়ার্ড সভাপতি বলছেন, ‘‘জেলা সভাপতির অদক্ষতা ও নেতৃত্বের গাফিলাতির জন্যই পুরভোটে এই হাল হয়েছে। সংগঠনে বদল না হলে পঞ্চায়েতে প্রভাব পড়বে।’’ তবে জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের পর জেলাজুড়ে প্রচুর সন্ত্রাস হয়েছে। তাই অনেকে ভয়ে চুপচাপ বসে রয়েছেন। এত সন্ত্রাসের পর পুরসভায় আমরা ১৮টি প্রার্থী দিতে পেরেছি, এটাই অনেক। ১৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ার মত পরিস্থিতি ছিল না। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
জেলায় গত পঞ্চায়েতে ভোটে জঙ্গলমহলে গেরুয়া শিবির অনেকেটাই প্রভাব ফেলেছিল। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ঝাড়গ্রাম জেলায় ২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে, দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হয়েছিল। এমনকি তিনজন জেলা পরিষদের সদস্য জয়ী হয়েছিলেন। তারপর লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনটি বিজেপি নিজেদের দখলে এনেছিল। লোকসভা ভোটে শহরে বিজেপির ভোট ছিল ৪৫ শতাংশ। দশটি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই জেলা সভাপতির পদে বদল ঘটে। নতুন জেলা সভাপতি হন তুফান মাহাতো। বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভোটের হার কমে হয় ৩৬ শতাংশ। শহরে তৃণমূলের ভোটের হার বেড়ে হয় ৫৫.২৫ শতাংশ। পুরভোটের কয়েকদিন আগে বিজেপির নতুন জেলা কমিটি গঠন হয়। সেখানে অনেকেই বাদ পড়েন বলে অভিযোগ। এমনকি বিজেপির জেলা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখান নেতা¬-কর্মীদের একাংশ। কিন্তু তারপরও জেলা কমিটি পরিবর্তন হয়নি। গেরুয়া শিবিরের এক নেতার দাবি, ‘‘জেলা নেতৃত্ব বদল না হলে সংগঠন আরও তলানিতে যাবে। তবে চলতি মাসের শেষে রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।’’ এবার শহরে পুরভোটে প্রথম থেকেই অনেকটা পিছিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। কারণ, বিজেপির সাংসদ দিলীপ ঘোষ প্রচারে লোক না হওয়ায় জেলা নেতাদের ধমক দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বিজেপির সেরকম প্রচার নজর কাড়েনি। দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপির নগর মণ্ডলের সভাপতি নন্দন ঠাকুর ছিলেন একেবারেই নিশ্চুপ। এমনকি নগর কমিটির ৮০ শতাংশ প্রচারে নামেনি। মহিলা মোর্চাও প্রচারে নামেনি। নন্দন বলছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের পর যে ভাবে অত্যাচার হয়েছে। সেই সময় দল পাশে দাঁড়ায়নি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেছিলাম। সেকথা কর্ণপাত করেনি। তার জেরেই নিশ্চুপ ছিলাম।’’ তবে প্রচারে খামতি ও তবে ঐকবদ্ধ্যের অভাবের কথা স্বীকার করছেন বিজেপির সাংসদ কুনার হেমব্রম। কুনার বলেন, ‘‘আমরা বেশি করে পথসভা করতে পারিনি। ভোটের আগে জেলা কমিটির পরিবর্তন হয়েছিল। সেই সময় শহরের অনেকের নাম বাদ গিয়েছিল বলে প্রচারে বেরোয়নি। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা দল করছেন। তাঁরা বাদ পড়লে ক্ষোভ তো থাকবেই।’’