মাথাভাঙ্গা পুরবোর্ড গঠনে দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পাল্টা নাম প্রস্তাব তৃণমূল কাউন্সিলারের, ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি জেলা সভাপতির।

মনিরুল হক, কোচবিহার: দলীয় নির্দেশ অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে মাথাভাঙ্গায়। আজ কোচবিহার জেলার তিন পুরসভায় বোর্ড গঠন হয়। এরমধ্যে অন্যতম মাথাভাঙা পুরসভা। সেখানে দলীয় চিঠিতে চেয়ারম্যান পদে লক্ষপতি প্রামাণিক এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিশ্বজিৎ সাহার নাম উল্লেখ করা ছিল। এই দুজনকে সমস্ত দলীয় কাউন্সিলারদের সমর্থন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে। কিন্তু বোর্ড গঠনের সময় দলের প্রস্তাবিত নামের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসেরই এক কাউন্সিলার দলের শহর ব্লক কমিটির সভাপতি তথা কাউন্সিলার বিশ্বজিৎ রায়ের নাম ঘোষণা করে দেন। এতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ দলের কর্মী সমর্থকদের একটা অংশ পুর ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে যদিও চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য দলীয় চিঠিতে থাকা নাম দুটিকেই বেশীর ভাগ কাউন্সিলার সমর্থন জানালে তারাই ওই পদে বসেন বলে জানা গিয়েছে।
এদিন মাথাভাঙ্গায় পুরো বোর্ড গঠন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের গোষ্ঠী লড়াই প্রকাশ্যে চলে আসার পরে দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় সেখানে গিয়ে হাজির হন। দিনহাটা এবং তুফানগঞ্জ পুরসভায় এদিন বোর্ড গঠন থাকায় সেখানে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হয়েছিল বলে মাথাভাঙা পুর বোর্ড গঠনের সময় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন নি। তাই তিনি বোর্ড গঠনের পরে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলারদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বলে জানান পার্থ বাবু। তিনি বলেন, আমাদের দলের এক কাউন্সিলার দলীয় সিধান্তের পাঠানো নামের বাইরে অন্য একজনের নাম ঘোষণা করেছিলেন। এবং অন্য এক কাউন্সিলার সমর্থনও জানিয়েছিলেন বলে খবর পেয়েছি। আমাদের এখানে দলের পক্ষ থেকে পরেশ চন্দ্র অধিকারী, জেলা যুব সভাপতি কমলেশ অধিকারী অবজার্ভার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কাছে রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজ্য নেতৃত্বের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারের সিধান্ত নিতে হলেও আমরা পিছুপা হব না।”
মাথাভাঙা পুরসভায় ১২ টি আসনের প্রত্যেকটিতেই তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। বোর্ড গঠনের আগে দলের জেলা সভাপতি পারথপ্রতিম রায় কাউন্সিলার এবং দলীয় নেতৃত্বের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে অবজার্ভার হিসেবে পরেশ অধিকারী, গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ এবং কমলেশ অধিকারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলারদের মধ্যে দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লক্ষপতি প্রামাণিককে। চিপ হুইপ ছিলেন কাউন্সিলার তথা মাথাভাঙা শহর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়। নির্দেশ ছিল দলের রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো বন্ধ খামের মধ্যে আসা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নামের চিঠি বোর্ড গঠনের সময় খুলে নাম ঘোষণা করা হবে। আর দলের সমস্ত কাউন্সিলার ওই নাম দুটিকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু মাথাভাঙ্গায় বোর্ড গঠনের সময় তৃণমূল কাউন্সিলার প্রবীর সরকার আচমকাই দলীয় নির্দেশ অমান্য করে চেয়ারম্যান পদের জন্য বিশ্বজিৎ রায়ের নাম ঘোষণা করে দেন বলে অভিযোগ।
কোচবিহার জেলায় ৬ টি পুরসভার মধ্যে এদিন ৩ টিতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আগামী কাল কোচবিহার পুরসভা সহ আরও দুটি বোর্ড গঠন করার কথা রয়েছে। মাথাভাঙ্গার এই ঘটনা যাতে অন্য পুরসভা গুলোতেও প্রতিফলিত না হয়, সেই কারণে তৃণমূল নেতৃত্ব আরও বেশী সতর্ক বলে দলীয় সূত্রের খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *