রাখে হরি মারে কে? মাতলা নদীতে ৫ ঘন্টা ভেসে থেকে প্রাণে বাঁচলেন ৫৫ বছরের বৃদ্ধা।

0
292

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নিজস্ব সংবাদদাতা:- প্রবাদে রয়েছে রাখে হরির মারে কে?সেই প্রবাদ বাক্য প্রতিফলিত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার অন্তর্গত ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি এলাকায়।প্রায় ঘন্টা পাঁঁচেক নদীতে ভেসে থাকার পর পুলিশ,মৎস্যজীবী ও গ্রামবাসীদের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচলেন বছর পঞ্চান্ন বয়সের গান্ধারী মন্ডল নামে এক বৃদ্ধা।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাদামতলা এলাকার হালদার পাড়ার বাসিন্দা গান্ধারী মন্ডল।অন্যান্য দিনের মতো রবিবার সকালে মাছ ধরার জন্য দক্ষিণ রেদোখালির সংলগ্ন মাতলা নদীতে গিয়েছিলেন।মাছ ধরার সময় আচমকা পা পিছলে মাতলা নদীর গভীর জলে পড়ে তলিয়ে যায়। নদীতে সেই সময় জোয়ার ছিল।জল থেকে প্রাণে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন।আসে পাশে কেউ না থাকায় এবং সাঁতার না জানার জন্য সমস্ত চেষ্টা বিফলে যায়।দীর্ঘক্ষণ নদীতে ভেসে লবণাক্ত জলে খেয়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন।দীর্ঘ প্রায় ঘন্টা পাঁচেক পর মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের নজরে পড়ে।তারা নদীতে কিছু একটা ভাসতে দেখেন।তাদের সন্দেহ হয় নদীতে মৃতদেহ ভাসছে।তারা সাথে সাথে স্থানীয় গোলাবাড়ি গ্রামে খবর দেয়।নদীতে মৃতদেহ ভাসছে খবর চাউর হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।খবর যায় গোলাবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পেও।ওই মৎস্যজীবির দল,কয়েকশো গ্রামবাসী ও গোলাবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এসআই শুভঙ্কর করণ,সিভিক ভলেন্টিয়ার সান্তনু পাটারী,রাজু পাত্র’রা মাতলা নদীর তীরে হাজীর হয়। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি মৎস্যজীবীদের সাথে করে গোলাবাড়ির পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ কর্মীরা নৌকা করে মাতলা নদীতে ভাসমান মৃতদেহের কাছে পৌছায়। সেখানে পৌঁছে মৃতদেহ নদীর জল থেকে তুলতেই সকলের চক্ষু চড়ক গাছ। মৃতদেহ নৌকায় বসে কথা বলতে শুরু করে। যাকে মৃতদেহ বলে সন্দেহ করছিলেন,তিনি জীবিত আছেন। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘন্টা মাতলা নদীর লবণাক্ত জলে ভেসে হাবুডুবু খেতে খেতে অচৈতন্য হয়ে ভাসছিলেন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মাতলা নদী থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন তারা।নিয়ে আসা হয় স্থানীয় গোলাবাড়ি খেয়াঘাটে।একরাস উদ্বেগ নিয়ে জড়ো হয় এলাকার কয়েকশো গ্রামবাসী।যেনতেন প্রকারে বৃদ্ধাকে সুস্থ করে তোলার প্রাণপন চেষ্টা করেন।সেখানে গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা শুরু হয়।স্বঃস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন, মৎস্যজীবীর দল ও গ্রামবাসীরা।এরপর গোলাবাড়ি ক্যাম্পের পুলিশের তৎপরতার ওই বৃদ্ধাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
পুলিশ প্রশাসন,মৎস্যজীবীর দল ও গ্রামবাসীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নজীর বিহীন ভাবে প্রাণ ফিরে পাওয়া বৃদ্ধার পরিবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য বিগত কয়েকদিন আগেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশ ডুবন্ত লঞ্চ থেকে তিন নাবিক কে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কে বাহবা জানিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ।
এবার ক্যানিংয়ে ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের মানবিক কাজ কে প্রশংসার ভরিয়ে দিয়ে কুর্ণিশ জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষজন সহ ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরিত্র বোস ও তৃণমূল নেতা ইন্দ্রজিৎ সরদার সহ অন্যান্যরা।
তৃণমূল সভাপতি অরিত্র বোস জানিয়েছেন ‘গোলাবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ কর্মীরা সঠিক সময় মতো এগিয়ে না আসলে হয়তো ওই বৃদ্ধা কে বাঁচানো সম্ভব হতো না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here