সত্যব্যতের ভালোবাসা: ডঃ অশোকা রায়।

0
361

আমি সত্যব্রত। নামটা খুব গালভরা। ছোটবেলায় কে যেন কানের কাছে বীজমন্ত্র দেয়ার মতো করে বলত, “জানিস তো, তোর নামের মানে হচ্ছে সত্য যার ব্রত। সুতরাং সব সময় সত্য পথে থাকবি, সত্য কথা বলবি। বুঝেছিস? আর ভালবাসতে চেষ্টা করবি সকল কে। তাহলেই সকলের ভালোবাসা পাবি। ” যতদূর মনে হয় মা বলতো এ’ কথা। সে তো অনেক দিন আগের কথা। মা তো চলে গেছে সেই কবে।তখন আমি বোধহয় তিন কি চার। বাবা আর বিয়ে করেনি বটে, তবে তার নানা কাজে ব্যস্ততা। শেয়ার মার্কেটের দালালি করার জন্য লায়ন্স রেঞ্জের স্টক এক্সচেঞ্জে যাতায়াত, ফেরতা পথে জুয়া-সাট্টার ঠেকে ঢুঁ, অনেক রাতে পাড়া মাত করে পাঁড় মাতালের দরজা ঠেঙানো.. এ হেন বাবার সত্যব্রতের
সত্য নিষ্ঠা নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ কোথায়?
সুতরাং আমার সামনে পিছনে কোন ভালোবাসা ছিল না। কর্ণের কবচ- কুন্ডলের মতো আক্ষরিক অর্থে ভালোবাসা নিয়ে আমি জন্মাইনি।মাঝে মা কদিনই বা ছিল? শেষ পর্যন্ত আকাশের তারা হয়ে গেল। তাই
ভালোবাসা আমার আইনী অধিকার হয়েও ঠিক আমার হলো না কোনদিন। অথচ সত্যব্রত মানে আমার মনে দুটো জিনিসের প্রতি প্রগাঢ় অনুরক্তি… সত্য আর ভালোবাসা। অথচ দুটো জিনিসই আমাকে প্রতি পদে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
খুব ছোটবেলায় সত্য বলার জন্য বাবার হাতে মার খেয়েছি। বাবার বোধহয় কারোর কাছে কিছু টাকা ধার ছিল। সেই লোকটি তার ন্যায্য পাওনা চাইতে বাড়ি বয়ে এসেছে। বাবার থরহরিকম্প।
আমাকে কাছে টেনে তোষামোদ, ” যাও বল গিয়ে বাবা বাড়ি নেই। ” আমি হুকুম তামিল করেছি, দরজা খুলে লোকটিকে বলেছি, ” বাবা বললেন, বাবা বাড়ি নেই। ” লোকটির বজ্রগর্ভ চিৎকার, “নিষাদ বাবু শীঘ্র বেরিয়ে আসুন”। বাবার স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে আসা… সর্বাঙ্গে আটা। আসার সময় বোধহয় তাকে রাখা আটার কৌটো উল্টেছে মাথার উপর। কারণ তাকটা প্রায় বাবার মাথার কাছাকাছি।শার্দুল মুহুর্তে শৃগালে পরিণত। তা’ও আবার লেজ গোটানো সাদা শৃগাল প্রবর। শার্দুলের বীরবল উধাও।
আগন্তুক মুষ্টিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েই এসেছে। কিন্তু যুদ্ধে তো প্রতিপক্ষের দরকার। কিন্তু বাবা তো ভিক্ষুকের ভূমিকায়… ” আর কদিন সময় দেন দত্ত বাবু, সুদে- আসলে সব মিটিয়ে দেব।” গালি গালাজ বর্ষনের পর দত্ত বাবু বলেছে, “আমি এক কথার লোক, ঠিক সাতদিন সময় দিলাম”। বাবা “হেঁ হেঁ “করে হাত কচলেছে।
দরজা বন্ধ করে বাবার পুনঃ রূপান্তর… শৃগালের সহজাত ব্যাঘ্রের রূপধারণ করা। এরপর আমার দুর্গতি সহজেই অনুমেয়। পায়ের ব্যাথার জন্য স্কুল কামাই। হেডমাস্টার মশাই বলেন, “গার্জেন’স লেটার? ” উত্তর দিয়েছি বিনম্র ভাবে “গার্জেনেরই কীর্তি এটা, লাঠির বাড়ি।একসময় নাকি লাঠিয়াল ছিল।ওনার কাছে কৈফিয়তের লেটার চাইব কি করে স্যার? প্রাণটা তো ওনারই দেওয়া, নেওয়ার আইনগত অধিকার যে তাঁর নেই.. রাগের মাথায় সে সব আইনের কুটকচালে শব্দ ভুলে মেরে দেবেন। আর তা ছাড়া লেটার তিনি
প্রথমতঃ দেবেন না। আর দিলেও মিথ্যে কারণ দর্শাবেন। আমি সত্যব্রত। সত্যের অপলাপ সইতে পারব না স্যার। আমি তো সত্যি কথা বললাম স্যার, তাতে কি হবে না?” “না হবে না।স্কুলের একটা ডেকোরাম আছে”।”তা বটে স্যার”। এরপর আর কি বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছেন হেডমাস্টার মশাই। ছেলে সত্যি কথা হেডমাস্টার মশাই কে বলে দিয়েছে বলে বাবা ব্যাপারটা সরল করেছে “হ্যাঁ রাগটা একটু বেশিই চড়ে গিয়েছিল। তা বাবার তো ছেলেকে শাসনের অধিকার আছে… কি বলেন হেডমাস্টার মশাই? আচ্ছা একটা সাদা কাগজ দেন তো। কারণ দর্শিয়ে একটা গার্জেন’স লেটার লিখে দিই” বাবা কি সব লিখে চিঠিটা বাড়িয়ে দেন হেডমাস্টার মশাইয়ের দিকে। চোখ বুলিয়ে হেডমাস্টার মশাই হতভম্ব। আমার দিকে তাকালেন একবার। আমি নিশ্চিত বাবা মিথ্যে কারণ দর্শিয়েছে। আমি বলেছি, “আমি আসবো স্যার? ” হেডমাস্টার মশাই বোধহয় আমাকে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলতে চাননি। বলেছেন,
” এসো। “
বাড়িতে ফিরে বাবার আমার সত্যি কথা বলার ডোজটা এবার একটু কম… একগালে পাঁচ আঙুলের দাগ। তার জন্য অবশ্যই আমার আর স্কুল কামাই হয় নি। তবে বন্ধু রা যখন জিজ্ঞেস করেছে তোর গালে পাঁচ আঙুলের দাগটা বেশ জব্বর। কিসের দাগ রে? সত্যি কথা বলেছি।
তখন আমি একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আগের হেডমাস্টার মশাই অবসর নিয়েছেন। নবীন স্যার হেডমাস্টার হয়েছেন। বয়েসেও তিনি নবীন। মাত্র বছর খানেক আগে এসেছেন এই স্কুলে অঙ্কের মাস্টার মশাই হয়ে। বয়েস, কার্যকাল এবং যোগ্যতার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা অনেক মাষ্টার মশাই কে টপকে নবীন স্যার হেডমাস্টার মশাই। কানাঘোঁষায় শোনা যায়, বাজার মাত করা রাজনৈতিক সিম্বলের ছাতার তলায় রয়েছেন এই নবীন স্যার। তবে সে সব তো গুজব, সত্যির পরিমাণ কত.. তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তাই অস্পষ্ট সত্য নিয়ে আমি রিসার্চ করি না। আমি যে সত্যব্রত। আমার নবীন স্যার কে অপছন্দ বা নবীন স্যারের আমাকে অপছন্দের কারণ, আমি অঙ্ক না বুঝতে পারলে, বলি বুঝতে পারিনি। অন্যরা না বুঝেও বলে, ” হ্যাঁ স্যার বুঝেছি”। নবীন স্যার বলেন, ” হ্যাঁ বুঝবিই তো। আমি তো অঙ্ক তোদের কাছে জলবৎ তরল করে দিই, তাই না রে”? আমার সহপাঠীদের সমস্বরে ” হ্যাঁ তাই তো স্যার। ” আমি চুপ করে থাকি। স্যার উঠে এসে আমার কান ধরে বলেন, ” চুপ কেনো? ” ” বুঝি নি স্যার। ” তুই সত্যব্রত একটা গাধা। সবাই বুঝলো, শুধু তুই না। ” মিথ্যে বলছি না স্যার, সত্যি বুঝতে পারিনি। ” কাল হোম ওয়ার্ক করে আনবি, বুঝেছিস গাধা”। হোম ওয়ার্ক করে এনেছি পরদিন। ভুল হওয়া স্বাভাবিক। স্যার বলেন, ” অন্যরা ঠিক করল, তোর ভুল কেন রে লম্বোদর”? বলেছি ” ওরাও আপনার শেখানো বোঝে নি, প্রাইভেট টিউটর কে দিয়ে করিয়ে এনেছে। কেউ কেউ হয়তো এখন নিজে নিজেই করতে পারবে স্যার, ওদের প্রাইভেট টিউটর শিখিয়ে দিয়েছে”। এ ধরনের দিনে অঙ্কের ক্লাস থেকে আমার বহিষ্কার অবধারিত। সহপাঠীদের তিরষ্কার, “সত্যি কথা বলতে তোকে কে বলেছে”?
সংস্কৃত পন্ডিত বয়স্ক। শব্দ রূপ, ধাতু রূপ পড়াতে গিয়ে ঢুলুনি আসে। সংস্কৃত শব্দ ক্ষীণ হয়, নাসিকা গর্জনে ক্রমশ কান ঝালাপালা। ঝুঁকি নিয়েও ক্লাশের প্রথম হওয়া অবিনাশ আর তার সাথীরা পন্ডিত মশায়ের লম্বা টিকি চেয়ারের পেছনের ওপরের হাতলে বেঁধে দেয়। ক্লাশ শেষের ঘন্টার শব্দে পন্ডিত মশায়ের ঘুম ভাঙে। ধড়ফড় করে পুঁথি হাতে উঠতে যান। টিকি বাঁধা চেয়ার নিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান চেয়ার সুদ্দু মাটিতে। অবিনাশচন্দ্র ছদ্ম সহানুভূতি নিয়ে তাঁকে সাহায্য করে উঠে দাঁড়াতে। কোঁকাতে কোঁকাতে পন্ডিত মশাই খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে যান স্টাফ রুমের দিকে। অল্প পরে হেডমাস্টার মশাই আসেন ক্লাশে, ” পন্ডিত মশাই কে এভাবে আহত করলো কে”? অবিনাশ চন্দ্র বেমালুম মিথ্যে বলে, ” স্যার সত্যব্রত”। নবীন স্যার বলেন, “সত্যব্রত এদিকে এসো”। আমি বলি, “স্যার আমি করি নি অবিনাশ আর ওর বন্ধু রা করেছে”। বন্ধু দের নাম বলবার উদ্যোগও নিয়েছিলাম, তার আগেই চাবুকের ঘা বেশ অনেক গুলো আমার পিঠে… “মিথ্যেবাদী”। আধা অচেতন হবার আগে শুনেছি সত্যব্রত নামকরণের এই সার্থকতা!!! সব সময় খালি মিথ্যে কথা। আধা অস্ফুট স্বরে বলেছি, ” আমি মিথ্যে বলিনি”। সিক রুমে বাবা এসেছে, স্যার কে বলেছে, “ওর মায়ের ওর সত্যব্রত নাম রাখাটাই ভুল হয়েছে”। আমি স্কুল ছেড়েছি
উচ্চ মাধ্যমিক দিই নি। বাবার তাতে তোয়াক্কা নেই। পাড়ার লোকের কৌতূহল.. ” উচ্চ মাধ্যমিকের মুখে কেউ লেখাপড়া ছাড়ে”? উত্তর দিয়েছি, ” কি করব বলো? মিথ্যে বলতে পারি না যে। মিথ্যে বলাটাই একটা যোগ্যতা এ যুগে। আর চার্লস ডারউইন তো যোগ্যতমের উদ্বর্তনের কথা বলেছেন। আমি এ যুগে মোস্ট আনফিট। কারণ সত্যি কথা বলি।
উচ্চ মাধ্যমিক দিই নি। কিন্তু কম্পিউটারের একটা কোর্স করে মোটামুটি একটা চাকরি করি। একদিন অফিস শেষ হবার পর বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে আছি, বৃষ্টি হয়েছে একটু আগে এক পশলা। পায়ের পাতা ডোবা জল। আমি প্যান্ট গুটিয়ে নিয়েছি গোছ অবধি। একটা লাল রঙের চারটে রিঙ ওলা অডি গাড়ি জোরে পাশ করল। গতির জন্যই আমার শার্টের কিছুটা ভিজল জমা নোংরা জলে। বিরক্তিকর। গাড়িটা ব্যাক করে এসেছে। ড্রাইভার নেমে এসেছে আমার কাছে, ” মেম সায়েব গাড়িতে ডাকছেন আপনাকে”। ” আমাকে? আপনি বোধহয় ভুল করছেন”। ” না আপকোই বুলা রহি হ্যয়”। ” কৌন হ্যয় আপকো মেম সাহেব”? ” “চলিয়ে না আপ। আপ পহেচান যায়েঙ্গে উনকো”। কৌতূহল হয়। ড্রাইভারের সাথে হেঁটে যাই গাড়ির কাছে। গাড়ির পেছনের দরজা ড্রাইভার নয়, অন্য কেউ খুলে দেয়…” ভেতরে উঠে আসুন,আবার বৃষ্টি আসছে “। আহ্বায়ক আন্তরিক। আমি মোহ মুগ্ধ। বিধাতার কি খেয়ালে আমি গাড়ির নরম গদীতে তলিয়ে গেছি। চোরাবালি আমায় ক্রমশ গ্রাস করছে। গাড়ির মালকিন আমার পরিচিত। পরিচিত মানে সেই পরিচয় এতদিন পর্যন্ত সেলুলয়েডের ফিতেতে। নামকরা চিত্র অভিনেত্রী। অনেক সিনেমা তার দেখেছি। টুকটাক কথায় সময় পেরিয়ে পৌঁছে গেছি আমার কিনু গোয়ালার বাড়িতে। সে হেসে বলেছে “ফোন নাম্বার দাও’। এরপর ফোনে কথা হয়েছে। দেখা হয়েছে স্টুডিও ফ্লোরে, রাতের নির্জন অবকাশে লং ড্রাইভে দুজনে দুজনের সান্নিধ্য উপভোগ করেছি। ওর বাড়িতে দিন- রাত কেটেছে। ও বলেছে আমায় ভালোবাসে। আমি বলেছি, আমিও। ভ্যালেন্টাইন ডে তে, ওর জন্মদিনে উপহার এনেছি সাধ্যমতো। খাওয়া দাওয়া করেছি আমার অবস্হা অনুযায়ী। ছোট মেয়ের মত খুশি হয়েছে। একবারও নাক সিঁটকোয় নি। একদিন বলেছে ভীষণ ফুচকা খেতে ইচ্ছে করে। আমি বলেছি “মব- এ্যারেস্টেড হবে তো”। ” আরে দূর! বাড়িতে একটা বোরখা আছে পড়ে নিচ্ছি”।
যখন ভাবছি ওর সঙ্গে কথা বলব, আমাদের বিয়ে নিয়ে, তখনই বিপত্তি। সেই রাতে যেই কথা পাড়বো পাড়বো করছি, ওর এ্যাটেনডেন্ট এসে বলেছে, ” ম্যাডাম, জার্নালিস্টরা এসেছে মোহনা ছবির চরিত্র টা সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে”। ও আমাকে বলেছে ” তুমি পাশের ঘরে যাও”। আমি অপমানিত। পাশের ঘরে যেতে অস্বীকার করেছি”। ইতিমধ্যে জার্নালিস্টরা ড্রইংরুমে ঢুকে পড়াতে ও আর আমাকে কিছু বলতে পারেনি। জার্নালিস্টরা মোহনায় ওর চরিত্র সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করেছে। ও সুচারুভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আমি চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ এক মেয়ে- জার্নালিস্ট প্রশ্ন করে ওকে,
” আচ্ছা এই ভদ্রলোক কি আপনার ফিঁয়াসে? তাই যদি হয়, আপনারা বিয়ে করবেন কবে”? দক্ষ চিত্র অভিনেত্রী হেসে ওঠে, ” ওমা, ওকে দেখে কি আমার ফিঁয়াসে মনে হচ্ছে? গায়ে পড়ে আলাপ করেছিল। নাছোড়বান্দা একেবারে। দেখছেন তো আজ একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আমি আবার পাবলিক রিলেশন বজায় রাখার পক্ষপাতী প্রফেশনের স্বার্থে”। আমি উঠে চলে এসেছি। আর কোন সম্পর্ক রাখিনি। একটু ভুল বললাম, ও রাখেনি। চিত্রাভিনেত্রী তো। বেশ কয়েকটি দিন আমার সাথে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা করল। আমি সত্যব্রত কিন্তু সত্যি ওকে ভালোবেসে ছিলাম। ভালোবাসার মিথ্যাচারে বিশেষ বিশ্বাস ছিল না। মা যে বলেছিল, তুই ভালোবাসা কাউকে দিলে, সে বা তারাও তোকে ভালোবাসবে। তুমিও মা মিথ্যে বলেছিলে। আজ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝছি, সত্য বলা পাপ, ভালোবাসা মূর্খামি।

আমার অনেক বয়েস হয়েছে এখন। এখন অনায়াসে অনর্গল মিথ্যা বলি। আর ভালোবাসার তো কোন প্রশ্নই নেই এখন, সে ভালোবাসা যে ধরণের হোক না কেন।কিনু গোয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। বর্ধমানের এক গ্রামের বাড়িতে থাকি। বংশ পরম্পরায় পাওয়া।আমাদের বাড়িতে বাগান আছে। অনেক ফল পাকুড় জন্মায়। সদর গেটে ইয়া বড়ো তালা ঝুলিয়ে রাখি। একটা মানুষ অত ফল পাকুড় খেতে পারি না, বিক্রিও করি না। নষ্ট হয়। তবুও পাড়ার লোকজনকে বিলিয়ে দিই না। বাচ্চাদের খেলার জন্য দরজা খুলে দিই না। স্বার্থপর দৈত্যের মতো সব আগলে রাখি। জানা নেই কোনদিন আমার শাপমোচন হবে কিনা। অবশ্য শাপমোচন আমিও চাই না। কেন চাইব বলুন তো? শুনলেন তো আমার জীবন কথা। যে মানুষ সত্য আর ভালোবাসার ছন্দে ছন্দিত হলো না, মানবিকতার গান গাইবে সে কি ভাবে বলুন তো? আমার জীবন জিজ্ঞাসার কোন জবাব কি আপনাদের মধ্যে কাছে আছে? থাকলে দিন না প্লিজ। শেষে স্বীকার করে নিচ্ছি, এভাবে বাঁচতে আমিও পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
আমার মৃত্যুর সময়ও বোধহয় ভালোবাসা এসে বলবে না, “ক্ষোভ করো না,
আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব তোমার সাথে।
আমার জীবনে ভালোবাসা যেনো থ্রু ট্রেন।
আমি বসে থেকেছি তার প্রত্যাশায়,
প্ল্যাটর্ফমে ঢোকার আওয়াজে স্নায়ু গুলো টানটান।
ঝমঝমানির সুর জাগিয়েছে
রক্তকোষের উচাটন।
ভালোবাসার এস্রাজের ছড়
দ্রুত থেকে দ্রুততর।
কালবৈশাখীর ঝড়ে রেললাইন ঘেঁষে বটের পাতার চামর দোলানো। অথচ ট্রেন বেরিয়ে গেছে আমাকে না নিয়ে।
আমি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য।
দ্রাঘিমাংশ পেরিয়ে খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছি।
ধরতে চেয়েছি মারীচ ভালোবাসা, ধরা দেয়নি সে। সত্য- মিথ্যার দোলায় আমি দোদুল্যমান।
মৃগতৃষ্ণা মেটেনি আমার।
কি করে আশা করি সেই ভালোবাসা, যা নিয়ে আমি জন্মাইনি।
হয়তো বা জন্মে ছিলাম ভালোবাসা কে সাথে নিয়ে,
কর্ণের কবচকুন্ডলের মতো,
ভাগ্যের পরিহাসে কোন ছদ্মবেশী ইন্দ্রকে করেছি দান।
আধুনিক পরশুরামের অভিশাপে ভালোবাসার দিব্যাস্ত্রের প্রয়োগ গেছি ভুলে,
সময়কালে।
প্রারব্ধ কর্মের ফল।
হেতু যাই হোক, আমি যেই হই, অলক্ষ্যে কেউ বলে, এটাই অবধারিত সত্য, সত্যব্রত. ..
ভালোবাসা তোমার জন্য নয় সত্য তোমার জন্য নয়।
না এ জন্মে, না অন্য কোন জন্মে। ভালোবাসা না নিয়ে ভালো থেকো সত্যব্রত।
সত্য কে অস্বীকার করে ভালো থেকো সত্যব্রত। বাইরের ঝড় হয়তো থেমেছে, ধূসর আকাশ আবার নীল হয়েছে। আমি আগের থেকে অনেক স্হিতধী। কিন্তু নিজস্ব ঘেরাটোপ একটা তৈরি করে নিয়েছি, যেখানে ভালোবাসা মারীচ মায়া।
7/9/2022
12:35 এ এস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here