0
238

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা; ১৪সেপ্টেম্বর: দলত্যাগী অঞ্চল সভাপতির মানভঞ্জন করতে বাড়িতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অথচ কিছুই জানেন না এলাকার বিধায়ক। একই দিনে এলাকার কর্মীদের বিক্ষোভ আবার জেলা নেতৃত্বের বাড়িতে আসা। প্রকাশ্যে শাসকদলের সংঘাত। তীব্র খোঁচা বিজেপির। তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপানোতোর। এই ঘটনা যেন চিত্রনাট্যকেও হার মানাচ্ছে। কিছুদিন আগেই দল এবং স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করে দল ছেড়েছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম। কার্যত এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে। বিধায়ক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তোপ দেগেছিলেন মনোজ রামকে। বিধায়কের সমর্থনের রাস্তায় নেমে মনোজ রামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখায় তুলসীহাটা অঞ্চলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি মনোজ রামের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এদিকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয় দীর্ঘ-দিনের রাজনীতিবিদ মনোজ রাম হয়তো অন্য দলে যোগ দেবেন। কিন্তু তারপরেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। তৃণমূলের মালদা জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান এবং জম্মু রহমান এসে দেখা করেন মনোজ রামের সঙ্গে। দীর্ঘক্ষণ তার বাড়িতে বৈঠক হয়। তার অভিযোগ শোনেন জেলা নেতৃত্ব। বৈঠক শেষে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে। মনোজ রাম কিছু দিন সময় চাইলেও তিনি তৃণমূলেই থাকবেন। মনোজ রামের সুরও অনেকটা নরম দেখা যায়। যদিও বিধায়কের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে তিনি নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি জানান জেলা নেতৃত্বকেও এই বিষয়ে জানিয়েছেন। এদিকে বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ বলেন এরকম কোন বৈঠকের কথা তার জানা নেই। ফলে সমগ্র ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

উল্লেখ্য, সারা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের দুজন ব্লক সভাপতি। চাঁচল বিধানসভার অধীনে পড়া চারটি অঞ্চল নিয়ে একজন এবং হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার অধীনে পড়া তিনটি অঞ্চল নিয়ে একজন। মনোজ রামের তুলসিহাটা অঞ্চল চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত। এদিকে শাসকদলের দুই নেতা বুলবুল খান এবং জম্মু রহমান হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তাজমুল হোসেন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ফলে এখানে একই ব্লকের অন্তর্গত দুই বিধানসভার বিধায়কের মতানৈক্য সামনে এসে পড়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সমগ্র ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। যা নিয়ে ফের চরমে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।

মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, মনোজ রামের বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা সব শুনলাম। তিনি দলের অনেক পুরনো দিনের কর্মী। তাই আমরা আজ এসেছি। উনার বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ তা উস্কানি দিয়ে হয়েছে। উনি কিছুদিন সময় চেয়েছেন। মনোজ রাম তৃণমূলেই থাকবেন।

দল ত্যাগী মনোজ রাম বলেন,জেলা নেতৃত্ব আমার বাড়িতে এসেছিল। তাদের সাথে কথা হলো আমি কিছুটা সময় চেয়েছি। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে বিধায়কের বিরুদ্ধে করা অভিযোগে আমি অনড় থাকছি। সেটা নেতৃত্ব কেও জানিয়েছি।

বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ জানান, আমি কলকাতায় আছি এই ব্যাপারে কিছু জানি না। বৈঠকের ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়নি। ব্লক সভাপতি আছেন ব্যাপারটি দেখবেন।

বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন,এক পক্ষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে আবার এক পক্ষ উনাকে ফেরার অনুরোধ করছে। একই ব্লকে দুই জন ব্লক সভাপতি। দুর্নীতি আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই তৃণমূল। মানুষ সব দেখছে।

মনোজ রাম কী আবার তৃণমূলেই ফিরে আসবেন? না অন্য সিদ্ধান্ত নেবেন? সেই দিকেই তাকিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহল। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে উনি এতো অভিযোগ করে দল ছাড়ার পর সেই দলে ফিরলে তা উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here