পুজোয় এই বার নতুন চমক হস্তচালিত তাঁতের কাপড়, চাহিদা ভালই ।

0
247

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- পুজোয় এই বার নতুন চমক হস্তচালিত তাঁতের কাপড় চাহিদা ভালই ।সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব দুর্গাপুজো। এই বছর একটু বেশি উৎসাহ বিগত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে সেই ভাবে আনন্দে সামিল হতে পারিনি তাই এই বছর একটু বেশি উৎসাহিত দুর্গাপুজো উপলক্ষে। নদীয়ার হস্ত চালিত তাঁতের অবস্থা সঙ্গীন। সেই হস্তচালিত কারখানা প্রায় বন্ধের মুখে । অল্প দামে হাতের নাগালে তাঁত শাড়ির বিপুল চাহিদা অন্যদিকে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে লভ্যাংশ ঘরে তোলা। তাই ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে সমগ্র হস্ত চালিত তাঁত শিল্প।
হস্তশিল্পের সুদক্ষ কারিগররা কাজ না হাওয়াতে দেশে-বিদেশে হোটেল রেস্তোরা, নির্মাণ কর্মীর কাজ বেছে নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হয়েছেন অভাবের সংসার সামলাতে। হাতের সেই বুননের আবেগ, নিখুঁত বুটি সেসব এখন ইতিহাস। তবে দরিদ্র এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে সস্তার শাড়ি উৎপাদন প্রয়োজনীয় হলেও। কিছু বিত্তবান এবং শিল্পের মর্যাদা দেওয়া মানুষজন আজও আছেন দেশে-বিদেশে। যেখানে তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে আন্তরিকতার বুনন।রানাঘাটের মেয়ে মান্ডবী চক্রবর্তী, পুঁথি বিদ্যায় গোল্ড মেডেলিস্ট, রবীন্দ্রভারতীতে সংস্কৃতে পিএইচডি পাঠরতা । ছবি আঁকা ফেব্রিক ক্র্যাফ্টের ওপর বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন শখে। 2017 সালে বিবাহ সূত্রে শশুরবাড়ী নদিয়ার শান্তিপুরের সুত্রাগর। স্বামী অভিক দত্তের বাড়িতে। বাপের বাড়ি হোক কিংবা শশুর বাড়ি এমনকি কোন নিকট আত্মীয়র বাড়িতেও তাঁতের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার জন্য এবং বাড়ির কাছে বিখ্যাত তাঁতের হাট হওয়ার সুবাদে মাঝেমধ্যেই সেখানে গিয়ে নিত্যনতুন ডিজাইন, তাঁতিদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা শুনতেন তিনি। স্বামী চাকরির সুবাদে সারাদিন থাকেন শান্তিপুরের বাইরে, ছোট্ট একরত্তি ছেলেকে নিয়েই, পৌঁছে যেতেন তাঁতিদের বাড়ি বাড়ি। নিজের আঁকা ছবি শাড়িতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন তাদের মধ্যে পারদর্শী দুই একজন তাঁত শিল্পীকে দিয়ে। ফেসবুক ,টুইটার সহ নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করিয়ে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ক্রেতা র দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে শুরু করেন। একের পর এক হস্ত চালিত তাঁত শ্রমিকের হাতের কাজের মেধা অন্বেষণ এর মধ্য দিয়ে আজ তার ২২ জন সুদক্ষ তাঁতি। এমনকি সারাদিনে ৫০০ থেকে হাজার টাকা উপার্জনের মধ্যে দিয়ে ,মজুরির দিক থেকে টেক্কা দিয়েছেন, উন্নত মেশিনে যন্ত্র চালিত মেশিনে কাজ করা তাঁতিদের কেও। শুধু তাই নয় করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন, বড় বড় মহাজনরা কাজ দেওয়া বন্ধ করেছিলেন, মান্ডবী দেবী, তার তাঁতিদের মজুরি দিয়ে গেছেন একইভাবে। শান্তিপুর ছাড়িয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালিত তাঁত শিল্পীরা বড় বড় মহাজন ছেড়ে নতুন দিশা দেখেছেন এই গৃহবধূর যোগাযোগে। তাই এই বছর দুর্গাপূজো উপলক্ষে শাড়ির উপর বিভিন্ন ধরনের নকশা লতাপাতা ফুল এই চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি বিভিন্ন পোর্ট্রেট এর কাজ শুরু করেন। শারদীয়া আগমনের বিভিন্ন চিত্র, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশের বেশ কিছু সিনেমার উদ্ধৃতি সহ অসাধারণ হাতের কাজ ফুটিয়ে তুলেছেনরবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান, বিখ্যাত গল্প উপন্যাসের বহুল প্রচলিত অংশ , সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল, ভ্যানগর্গের স্টারি নাইট আরো কত কি। সুতোর সূক্ষ্ম বুননে, তবে হ্যাঁ প্রথমে তিনি নিজে আঁকেন ছবি, এরপর সুদক এখন শুধু শাড়িতেই সীমাবদ্ধ নেই, কুর্তি, ধুতি, ড্রেস মেটেরিয়ালস , স্কার্ফ,ওড়না, ঘর সাজানোয় ব্যবহৃত বিছানার চাদর পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সৌখিন ঢাকনায় পর্যন্ত বিস্তারিত হয়েছে। মটকা, রেশম, কটন ,তসর ,স্টান সিল্ক ,লিলেন এ ধরনের নানান উপকরণ পার্শ্ববর্তী ফুলিয়াতে পেলেও, গুণগত মান বজায় রাখতে মাঝেমধ্যে তা অন্যান্য রাজ্য থেকেও আনেন।
তবে তার উৎপাদিত পণ্যের কোনো আউটলেট বা দোকান নেই। বিভিন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার নামি দামি কোম্পানি , হস্তশিল্পের গবেষক ছাত্রছাত্রী, এবং গুনমুগ্ধরা তা কিনে থাকেন। শাড়ি বুনতে সাত দিন সময় লাগে কোনটা বা এক মাস এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত বোনা চলে একটি শাড়িতেই, সবটাই কাজের উপর নির্ভর। তবে প্লেন থান একদিনই একটা বুনে ফেলা যায়, সেক্ষেত্রে ৩৫০ টাকার মার নেই, হাতের কাজ অনুযায়ী কেউ মজুরি পান প্রতিদিন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে এসবই নির্ধারণ হয়, শাড়ির বুনন সমাপ্ত হলে, মাঝে প্রয়োজন ভিত্তিক আনুমানিক হিসেবে টাকা নিয়ে থাকেন তারা, হিসাব নিকাশ শেষ হয়, শাড়ি সমাপ্ত হওয়ার পর। তবে এই বার পুজোয় দমফেলার সময় নেই যেমন অর্ডার পেয়েছেন তেমনি চাহিদা আছে।
এই বার পুজোয় কলকাতা, মুম্বাই সহ বিভিন্ন জায়গায় তার কাপড়ের অর্ডার যেমন এসেছে পাশাপাশি দুর্গাপুজো উপলক্ষে বেশ কয়েকটা শাড়ি বিদেশে চলে গেছে। চরম ব্যাস্ততার মধ্যে চলছে কর্মকাণ্ড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here