কল্যাণী এমস হাসপাতালে ওপিডি বিল্ডিংয়ে  ধন্বন্তরীর মূর্তি স্থাপন, বিজ্ঞান নাকি কুসংস্কার।

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  কল্যাণী এমস হাসপাতালে ওপিডি বিল্ডিংয়ে  ধন্বন্তরীর মূর্তি স্থাপন, বিজ্ঞান নাকি কুসংস্কার। কল্যাণী এমস হাসপাতালে ওপিডি বিল্ডিংয়ে  ধন্বন্তরীর মূর্তি স্থাপন করা হয়।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি হলেন হিন্দুধর্মে দেবগণের চিকিৎসক। তাকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয়। পুরাণে তিনি আয়ুর্বেদের সাথে সম্পর্কিত দেবতা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। পৃথিবীতে অবতাররূপ পরিগ্রহ করে, তিনি কাশীতে রাজত্ব করেছিলেন বলেই জনশ্রুতি।
ভগবান ধন্বন্তরী হিন্দু পুরাণে চিকিৎসা এবং আয়ুর্বেদের সাথে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দেবতা, প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি। তিনি ঐশ্বরিক চিকিত্সক এবং আয়ুর্বেদের উদ্ভাবক হিসাবে বিবেচিত হন। ভগবান ধন্বন্তরীকে এক হাতে অমৃত (অমৃতের অমৃত) একটি পাত্র এবং অন্য হাতে একটি শঙ্খ (শঙ্খ) ধারণ করে চার-বাহু দেবতা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, অন্য দুটি হাতে ঔষধি গাছ রয়েছে।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থন নামক মহাজাগতিক মহাসাগর মন্থনের সময় ভগবান ধন্বন্তরী আবির্ভূত হন। দেবগণ (স্বর্গীয় প্রাণী) এবং অসুর (দানব) অমৃত অমৃত প্রাপ্তিতে নিযুক্ত ছিলেন। ভগবান ধন্বন্তরী অমৃতের একটি পাত্র ধারণ করে আবির্ভূত হন এবং তা দেবতাদের কাছে নিয়ে আসেন, অবশেষে তাদের যৌবন ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করেন।

অন্য একটি কিংবদন্তীতে, ভগবান ধন্বন্তরী কাশীর রাজা দীর্ঘতামাস এবং রাণী সুধার পুত্র হিসাবে অবতারণা করেছিলেন বলে কথিত আছে। তিনি স্বয়ং ভগবান ইন্দ্রের কাছ থেকে আয়ুর্বেদ শিখেছিলেন এবং এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়েছিলেন। ভেষজ ঔষধ এবং নিরাময় কৌশল সম্পর্কে তার জ্ঞান মানবতার জন্য অপরিসীম উপকার নিয়ে এসেছে, যে কারণে তিনি আয়ুর্বেদের জনক হিসাবে সম্মানিত।

ভগবান ধন্বন্তরীকে ধনতেরাস উপলক্ষে স্মরণ করা হয়, যা হিন্দু আলোর উৎসব দীপাবলির দুই দিন আগে পড়ে। এই দিনে, লোকেরা তাঁর পূজা করে এবং সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে। ভগবান ধন্বন্তরীর আশীর্বাদ অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয় এবং সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সম্পর্ক কি!
আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিতকল্যাণী এমসের অধিকর্তা রামজী সিং কল্যাণী এমসির মেডিকেল সুপার অজয় মল্লিক ডেপুটি ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার ন্যাশনাল ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে ডাক্তার সুনন্দ দে বিজ্ঞান ভারতীর পক্ষ থেকে সপ্তর্ষি বিশ্বাস সহ বহু গুণীজন যারা রীতি মদন বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত ।
আশ্চর্যের বিষয় তাদের মুখ থেকে উঠে আসলো ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থাই নাকি ঈশ্বর এবং ধর্মের মেলবন্ধনে সাধিত হতো। নালন্দা তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় যদি ধ্বংসস্তূপে পরিণত না হতো তাহলে আজ বিশ্বকে চিকিৎসা শাস্ত্রে পথ দেখাতো ভারত। তারা বলেন ঋগ্বেদে অশ্বিনীকুমারদ্বয় নামে দুই চিকিৎসক ভাই ছিলেন, একথা আমরা অনেকেই জানি। পরবর্তী সময়ে যে দু’জন ভারতীয় চিকিৎসক এ দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁরা হলেন চরক ও সুশ্রুত।
বৌদ্ধ রাজা কানিস্কার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, যিনি “চরক সংহিতা”-র রচয়িতা। “চরক সংহিতা” গ্রন্থে তিনি ৫০০ ঔষধের বর্ননা দিয়েছেন। শুশ্রুতাকে (১২০০ খ্রীস্টপূর্ব) বলা হয় ভারতীয় শল্য চিকিৎসার জনক । তিনি রচনা করেছেন “শুশ্রুতা সংহিতা

আয়ুর্বেদ হলো ভারতবর্ষের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রের এক অঙ্গ। প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে ভারতবর্ষেরই মাটিতে এই চিকিৎসা পদ্ধতির উত্‌পত্তি হয়। আয়ুর্বেদ শব্দটি হলো দুটি সংস্কৃত শব্দের সংযোগে সৃষ্টি-যথা ‘আয়ুষ’, অর্থাৎ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ অর্থাৎ ‘বিজ্ঞান’। যথাক্রমে আয়ুর্বেদ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘জীবনের বিজ্ঞান’।

পৃথিবীর ভর তত্ত্বের মতন নাকি বিজ্ঞান চর্চা করা হয়েছে যুগে যুগে কিন্তু যা কিছু সৃষ্টি সেই প্রাচীন কালেই। শূন্যতত্ত্ব হোক কিংবা শল্য চিকিৎসা, আয়ুর্বেদ হোক বা কবিরাজি, যোগ প্রাণায়াম কিংবা আকুপ্রেশার এসবই সেই আমলের। আর সেই কারণেই বর্তমান চিকিৎসা স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হয়েছে তাদেরই কারণে, তাই শ্রদ্ধা জানাতে এবং সফলতা পেতে এই মূর্তি স্থাপন।

তবে এই বিষয়ে বিরোধিতা নেই এমন কিন্তু নয় বহু বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক ঈশ্বর বিশ্বাসী নন।
.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *