বাঁকুড়া জেলায় তিনজন সু প্রতিষ্ঠিত অভিজ্ঞ চিকিৎসক, প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করছেন দিনের পর দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ ইঁদুর দৌড়ের সমাজে যখন নিজের আখের গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত একটি বড় অংশের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তখন বাঁকুড়া জেলায় তিনজন সু প্রতিষ্ঠিত অভিজ্ঞ চিকিৎসক, প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করছেন দিনের পর দিন। গ্রামবাসীরা তাঁদেরকে ধন্বন্তরি হিসাবে মেনে নিয়েছেন। বিছানাগ্রস্ত রোগী উঠে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের চিকিৎসায়। নেপথ্যে রয়েছে শ্রীমত ভগবত গীতার আলোয় আলোকিত এক সামাজিক সংগঠন, আলোর দিশা কর্মযোগ। ঘটনাটি ঘটছে বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া-১ ব্লকের অন্তর্গত আন্দারথোল গ্রামে। প্রত্যন্ত গ্রামে কখনও কখনও থাকেনা বিদ্যুৎ। গরমকে উপেক্ষা করে মুঠোফোনের আলো জ্বেলে চলছে চিকিৎসা। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডক্টর প্রিয়দর্শী কুন্ডু, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল অফিসার ডক্টর দীপক গুপ্ত এবং ডঃ সৌরভ দত্ত বিগত আট মাস ধরে সপ্তাহে একদিন করে দিচ্ছেন বিনামূল্যে চিকিৎসার পরিষেবা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে ঔষধ এবং রক্ত পরীক্ষার সুবিধা পর্যন্ত।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিজিৎ মন্ডল। কলকাতার সিটি কলেজে পাঠরত অবস্থা থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সমাজের জন্য কিছু করার। সামাজিক মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করেন তিনি। নাম রাখেন “আলোর দিশা কর্মযোগ”। উদ্দেশ্য ছিল, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া। একের পর এক সহৃদয় মানুষ যোগদান করেন এই গ্রুপে। বর্তমানে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও, আলোর দিশা কর্মযোগের তত্ত্বাবধানে চলছে বিনামূল্যে চিকিৎসার এক বিরাট কর্মযোগ। বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মুখের কথায় এগিয়ে আসছেন সহৃদয় মানুষ। বিভিন্ন ঔষধের দোকান যোগদান করেছেন এই মহান কাজে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ঔষধ পাচ্ছেন রোগীরা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হল ভারত। জনসংখ্যার নিরিখেও সবচেয়ে এগিয়ে আমাদের দেশ। দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া বঞ্চিত দেশবাসী। দেশে রোগী এবং ডাক্তারের অনুপাত যথেষ্ট শঙ্কাজনক। রোগী পিছু ডাক্তারের সংখ্যা অনেকটাই কম থাকা সত্ত্বেও বাঁকুড়া জেলায় রয়েছেন বহু সহৃদয় চিকিৎসক। এই তিনজন তাঁদেরই অন্যতম। কর্মযোগ কে পাথেয় করে আলোর দিশার তত্ত্বাবধানে সাধারণ মানুষের সেবার জন্য নিয়োজিত করেছেন তাদের প্রাণ। সেই কারণেই হয়ত আন্দারথোল গ্রামে এই চিকিৎসকদের কেউ “গরিবের ডাক্তার” নয় ভগবানের দুত বলে মেনে নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *