দারিদ্র্যকে নিত্যসঙ্গী করে মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফলাফল মাথাভাঙ্গার ছাত্রী অনিমার, ভবিষ্যতের চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের সদস্যদের।

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ দারিদ্র্যকে নিত্যসঙ্গী করে মাধ্যমিকে প্রায় ৯১.৫৭ শতাংশ নম্বর পায় পানিগ্রাম হাই স্কুলের ছাত্রী অনিমা বর্মণ। তার ফলে স্কুলের শিক্ষকেরা খুশি হলেও হতাশার মেঘ ঘনিয়েছে পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে। অনিমার বাবা প্রয়াত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে, বড় দাদা সুকুমার বর্মণ কে এল ও সংগঠনের সদস্য হওয়ায় ২০০২ সালে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে পুলিশ এনকাউন্টারে মারা যায় বলে অভিযোগ। ছোট দাদা সুভাষ চন্দ্র বর্মন সংসারের হাল ধরে বোনের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬৪১ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মাথাভাঙা১ ব্লকের দেবোত্তর পানিগ্রাম এলাকার অনিমা বর্মণ।
স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অনিমা বরাবরই মেধাবী ছিল। মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করবে নিশ্চিত ছিল। আরও ভালো ফল না হওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষকরা জানান বাবার মৃত্যুর পর ছোট দাদা পড়াচ্ছেন। অর্থের অভাবে সেভাবে টিউশন পড়া হয়ে উঠেনি। লকডাউন এর সময় অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি অনিমা। তার পরেও অভাবের সংসার সঙ্গেই লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে অনিমা।ভালো ফল করেও চিন্তিত সে।
অনিমার মা অঞ্জলি বর্মণ জানান, মেয়ে ভালো ফল করেছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গ্রামবাসীরা প্রশংসা করছে শুনে ভালো লাগছে। মেয়ের বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন রয়েছে, তাতে প্রচুর খরচ। ছোট ছেলের যৎসামান্য রোজগারে কোনরকমে সংসার চলে। এখন সংসার চালাবো না মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করব সেই চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারি না।
অনিমা জানায়, ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু হয় না যে বিভাগেই পড়ি না কেন মন দিয়ে পড়বো।আমার স্বপ্ন ডব্লুবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবো।
দাদা সুভাষ বর্মন জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে হোম গার্ড পদে চাকরির আবেদন করেছি চাকরি পেলে বোনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব এবং বোনকে স্বাবলম্বী করে তুলব। অনিমা ও তার দাদা সুভাষ, দুজনেই সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেছে। আর্থিক সহযোগিতা পেলে স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *