ঝিঙে পটল (ধারাবাহিক, সপ্তম পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
442

পটলের মুখে বিষণ্ণতার ম্লান হাসি ! তবুও পটল মনে মনে ভাবছে এইরকম একটা সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে কিনা ? অন্যদিকে পটলের দুশ্চিন্তা, জায়গাটা সংস্কার করাটা ব্যয়সাপেক্ষ । শারীরিক পরিশ্রমে তার আপত্তি নেই । কিন্তু সেখানে বাসযোগ্য ঘর তুলতে গেলে বাঁশ খুটির প্রয়োজন । ছাপরা দিয়ে ঘর বাঁধলেও তার পেছনে রয়েছে কসরত ও ন্যুনতম খরচা । ঘর উঠলে তবেই দোকান খোলার সিদ্ধান্ত !
দোকান খোলা নিয়ে তার দ্বিমত নেই । কিন্তু কীসের দোকান খুলবে, সেটাই বড় প্রশ্ন ?
মাথায় এক রাশ দুশ্চিন্তা । পটল ভাবছে, অতঃপর কী করনীয় ?
পরেরদিন নোনাই নদীর বাঁধে কাজে গিয়ে পরত্যক্ত বাড়ির পরিস্থিতির গোটা ঘটনাটা মনোহরদের জানালো । তারা খুব খুশী । পটলকে সকলে মিলে কথা দিলো, ঐ পোড়োবাড়িটার ভাঙ্গার কাজ তারা নিজেরা খেটে বিনা পারিশ্রমিকে করে দেবে । সেই স্থানে পটল নিজস্ব পছন্দ মতো দোকান ঘর তুলতে পারবে ।
মনোহর পটলকে আরও বলল, “তোমাকে দাঁড়াতে গিয়ে আমাদের যতটা সহযোগিতা দরকার আমরা সেই সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ।“ পোড়োবাড়ি ভাঙ্গার খবরটা পটলের ভুঁড়ি কাকু অর্থাৎ গদাই খুড়োর কানে গেল । তিনি উপযাজক হয়ে পটলের কাছে এসে পুরো ঘটনাটা ভালভাবে জেনে নিলেন । তারপর পটলের পিঠ চাপড়ে বললেন, “নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য তুমি সঠিক পথে এগোচ্ছ । আমি তোমার পাশে আছি ।“
তারপর মাথা চুলকিয়ে গদাই খুড়ো আবার বললেন, “পোড়োবাড়ি ভেঙ্গে সেখানে তুমি কীসের দোকান দিতে চাইছ ?”
“এখনও ভাবিনি ।“ পটল গদাই খুড়োকে উত্তরে বলল ।
তবুও ব্যবসার ব্যাপারে তোমার মাথায় নিশ্চয় কিছু একটা প্লান ঘুরছে ।
আগে জায়গাটা পরিষ্কার করি । অনেক দিনের পোড়োবাড়ি । ইটের দালান খসে পড়ছে । চারিদিকে আগাছায় ভরতি । ঝোঁপ জঙ্গলের সমারোহ । প্রথমে টার্গেট, পোড়োবাড়ি পরিষ্কার করা । জায়গা পরিষ্কার হওয়ার পর সেখানে আবার ঘর তৈরীর প্রশ্ন ? কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ্য কোথায় ?
পটলের দিকে গদাই খুড়ো বললেন, “আমরা সবাই তোমাকে আমাদের ছেলের মতো ভালবাসি । বলতে পরো আমরা তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী ।“ সেই কথা মাথায় রেখে, তোমাকে আমি একটা পরামর্শ দিতে চাই !
হ্যাঁ, বলুন কাকা । আপনারা আমার গুরুজন । সুতরাং আপনারা যে পরামর্শ দেবেন সেটা আমি মাথা পেতে নেবো । তা ছাড়া আপনারা আমাকে খুব ভালবাসেন । আরও একটা কথা এখানে প্রনিধানযোগ্য । এলাকার মানুষের ব্যবহারিক দিকগুলি সম্বন্ধে আপনাদের ধারণা অনেক বেশী । তাই ব্যবসার ব্যাপারে আপনার মতো গুরুজনের পরামর্শ সর্বদা শিরোধার্য ।
তাহলে বলি বাছা ! বেশী উতলা হওয়ার দরকার নেই । জায়গাটা পরিষ্কার হয়ে গেলে কয়েকদিন রৌদ্রে শুকাক । তারপর ঘর তোলার পালা । আমি জানি, তোমার হাত নিঃস্ব । ঠিকমতো খাওয়া জুটছে না, তার উপর দোকান ঘর বানানো এবং দোকান সাজানো সহজ ব্যাপার নয় ! এখানেই আমার পরামর্শ — খালি জমির উপর বৃহদাকার ছাতা টাঙিয়ে ব্যবসা চালু করো । দেখবে, তোমার দোকানের শ্রীবৃদ্ধি ক্রমশ বাড়ছে ।
কিন্তু কীসের ব্যবসা করবো ?
তোমার যেটা মন চায় । তবে খাবারের দোকান খুললে তোমার পক্ষে ব্যবসা চালানো সহজ হবে । তবে এখানে আমার পরামর্শ, তুমি দুদিন আশেপাশে ঘুরে মানুষের খাওয়া-দাওয়ার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো । স্থানীয় মানুষের কী ধরনের খাবারের চাহিদা ?
ঠিক আছে খুড়ো । আপনার পরামর্শ আমার খুব মনে ধরেছে । ছাতা টাঙিয়ে প্রথমে দোকান চালু করাই শ্রেয় । আমি আশেপাশের মানুষজনের হালহকিকৎ ও তাদের বিভিন্ন সময়ের খাদ্যাভাস বোঝার চেষ্টা করে আপনাকে বিশদে পরে জানাচ্ছি । আপনার আশীর্বাদ আমার জীবনে মহামূল্যবান ।
পরেরদিন ভোর পাঁচটায় পটল জগাইয়ের হোটেলের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি শুরু করল । উদ্দেশ্য, মানুষের খাদ্যাভাস জানা ।
ভোরবেলায় পোড়োবাড়ির স্পটে গিয়ে পটল অবাক ! প্রচুর মানুষের সমাগম । রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে ট্যাক্সির ড্রাইভার পর্যন্ত । রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, ট্যাক্সি ড্রাইভার, টোটোওয়ালা, প্রমুখ মানুষজন একটু হাল্কা খাবার খোঁজ করছে । ভোরবেলায় অতিরিক্ত খাটুনির জন্য তাদের ক্ষিদে যথেষ্ট । তাই মনে মনে পটল ভাবল, সকালবেলায় সে মুড়ি ও ঘুগনির দোকান দেবে ।
সস্তায় পুষ্টিকর খাদ্য । খাবারের পেছনে খরচা কম । মুড়ি গ্রাম বাংলার মানুষের খুব প্রিয় । ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজা হয়ে গেলেই তারা মুড়ি খোঁজ করে ।
 চলবে