তৃণ্ময় বেরা, গোপীবল্লভপুর: ঝাড়গ্রাম মানেই কেবল বেলপাহাড়ি নয়। তার বাইরেও রয়েছে গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের অসংখ্য দর্শনীয় জায়গা। এবার গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলিকেও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। গত দশ বছরে পর্যটনের পালে হাওয়া লেগেছে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে। সন্ত্রাস এখন অতীত। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন বদলে গিয়েছে জেলার আটটি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা। বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে একাধিক গ্রামীণ হোম-স্টে। হোম স্টেতে বহু পর্যটক এসে থাকছেন। হোম স্টে তৈরি করতে বিনিয়োগ করছে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী প্রত্যন্ত আমলাশোল গ্রামে হোম স্টে চালু হয়েছে হাওড়ার একটি সংস্থার বিনিয়োগে। এমন আবহে পর্যটকদের একটা বড় অংশ কেবল বেলপাহাড়িমুখী। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে আগত পর্যটকদের ৮৭ শতাংশেরও বেশি পর্যটক বেলপাহাড়ি গিয়েছেন। তুলনায় সাঁকরাইল, বেলিয়াবেড়া, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলিতে পর্যটকদের সংখ্যা নিতান্তই কম। এই বিষয়টি নজরে আসার পরই গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গোপীবল্লভপুর এলাকাটি ঝাড়গ্রাম শহরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। প্রাচীন বৈষ্ণব সাধন ক্ষেত্র গোপীবল্লভপুরকে গুপ্ত বৃন্দাবনও বলা হয়। শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের ঐতিহ্য রয়েছে সুপ্রাচীন। বহু বৈষ্ণব গোপীবল্লভপুরে বার্ষিক উৎসবে আসেন। পাশাপাশি গোপীবল্লভপুরে প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ইকো পার্ক। সেই পার্কটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে জঙ্গলঘেরা জলাশয়ের পালে ঝিল্লি পাখিরালয়। রয়েছে সুবর্ণরেখা নদী পাড়ে হাতিবাড়ি প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্র। গোপীবল্লভপুরের বিডিও দেবজ্যোতি পাত্র বলেন, ‘‘গোপীবল্লভপুরে পর্যটন কেন্দ্রগুলি নতুন করে সাজানো হয়েছে। গোপীবল্লভপুরের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলি পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরা হচ্ছে।’’ নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার তীরে রয়েছে পৌরাণিক যুগের রামেশ্বর মন্দির। সেখানে রয়েছে দাদ্বশ শিবলিঙ্গ। জনশ্রুতি, বনবাসকালে রামচন্দ্র, সীতা ও লক্ষণ এই এলাকায় এসেছিলেন। সীতা সুবর্ণরেখার বালি দিয়ে দ্বাদশ শিবলিঙ্গ গড়ে পুজো দিয়েছিলেন। পরে বিশ্বকর্মার অনুরোধে সেখানেই মন্দিরটি নির্মাণ করেন রামচন্দ্র। তবে এই পৌরাণিক তথ্য বাদেও মনে করা হয় ওড়িশা থেকে আগত কোনও রাজার উদ্যোগে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল। মাকড়া পাথরের লহরা পদ্ধতিতে তৈরি মন্দিরটি ওড়িশিশৈলী। তবে মন্দিরটি অসম্পূর্ণ। মনে করা হয় কোনও কারণে মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। রামেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে ঐতিহাসিক তথ্য। বলা হয় একসময় এই এলাকায় মারাঠাবর্গীরা ব্যাপক লুন্ঠন অত্যাচার করত। মারাঠাবর্গীরা রামেশ্বর মন্দিরের আড়ালেই আত্মগোপন করে থাকত। সেই সময় তাঁরাও শিব পুজো করত। নয়াগ্রামে রয়েছে সহস্রলিঙ্গ শিবের মন্দির। এছাড়া রয়েছে চন্দ্ররেখাগড়। নয়াগ্রামে রয়েছে তপোবন। সেখানে রয়েছে বাল্মিকী মুনির আশ্রম। এসব তথ্যগুলি পর্যটকদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে চায় প্রশাসন। নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সঞ্চিতা ঘোষ বলেন, ‘‘নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এমনকি মানুষজনের থাকার জন্য রামেশ্বরে অতিথিনিবাস হয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীতে ডাহি পার্ক করা হয়েছে। নয়াগ্রাম ব্লককে মানচিত্রে অন্যতম জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে।’’