প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী— এক আশ্চর্য মহাজীবন কথা (পর্ব-১২) : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
277

প্রভুপাদ একটু অবাক হলেন এমন কথা শুনে। বেশ উদগ্রীব হয়েই তিনি ঘরের ভিতরের দিকে চেয়ে রইলেন এবং কিছুক্ষণ পরেই দেখলেন সশরীরে বিষ্ণুমূর্তি ঘরের মধ্যে । জীবন্ত বিষ্ণুমূর্তিকে হঠাৎ দেখে গোস্বামীপাদ প্রথমে হতচকিত হয়ে গেলেন। এমন অভাবনীয় ঘটনা ঘটবে তিনি সত্যিই বুঝতে পারেননি। শ্রীবিষ্ণু স্বয়ং এখানে ! কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে হল বিষ্ণুর বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন আছে কী? তিনি বিষ্ণুর বুকের দিকে তাকালেন, দেখলেন, না, যা ভেবেছিলেন ঠিক তাই। বিষ্ণুর বুকে শ্রীবৎস চিহ্ন নেই। গোস্বামীপাদের আর বুঝতে বিলম্ব হল না যে এই বিষ্ণু আসলে কী । তিনি মনে মনে নিজের ইষ্টমন্ত্র জপ করতে থাকলেন। ঠিক তখনই সেই বিষ্ণু কাঁপতে থাকলো আর বললো , “আমাকে কোথায় এনেছিস? কার সামনে দাঁড় করিয়েছিস? আমি এঁনার মন্ত্রের তেজ সহ্য করতে পারছি না। আমার অঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে যে ! থামতে বল ওঁনাকে। “—- এই বলতে বলতে বিষ্ণু পালিয়ে গেল ছুটে। বিষ্ণুকে ওভাবে পালিয়ে যেতে দেখে অপ্রতিভ হয়ে গেলেন নারায়ণস্বামী সাধু। তিনি কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না । তারপর হঠাৎই একটু রাগত কণ্ঠে বলে উঠলেন , “আপনি কী করেছেন বলুন তো ? কি মন্ত্র পড়েছেন ?”
গোস্বামীপাদ বললেন, “আমি আমার ইষ্টমন্ত্র জপ করছিলাম। কেন বলুন তো? অন্যায় করেছি কোন? বিষ্ণুকে চোখের সামনে সশরীরে দেখে স্থির থাকতে পারিনি! তাই ইষ্টমন্ত্র জপ করেছি।” নারায়ণস্বামী রুষ্ট কণ্ঠে বললেন, “কেন ইষ্টমন্ত্র জপ করার আপনার কী হল? দেখছেন যখন বিষ্ণু এসেছেন, মন্ত্র জপ করার কোন প্রয়োজন ছিল কী ? প্রণাম করতেন শুধু করজোড়ে তাহলেই তো হত !”
গোস্বামীপাদ—-“কিন্তু আপনার বিষ্ণু কেমন বিষ্ণু যে নিজের নাম সহ্য করতে পারেন না ! এ কি সত্যিই বিষ্ণু? সত্যি করে বলুন তো কি জারিজুরি খাটিয়েছেন? আমার তো মনে হচ্ছে কোন প্রেতাত্মাকে বশ করে এসব ভুলভাল কাজ করছেন আপনি। আর মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন !”

নারায়ণস্বামীজি ধরা পড়ে যাওয়ার মত একটু যেন ভয় পেয়ে গেলেন। প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীপাদ বললেন, “দেখুন আপনি কি জানেন না যে বিষ্ণু সাজলেও বা বিষ্ণুর রূপ প্রাপ্ত হলেও শ্রীবৎস চিহ্ন কেউ ধারণ করতে পারে না । সেই চিহ্ন একমাত্র স্বয়ং বিষ্ণুর বুকেই বিরাজমান থাকে। কৌস্তভ মণিও বুকে থাকে না। যেমন শ্রীলক্ষ্মীদেবীর থাকে পদ্মমালা, যেমন হরপার্বতীর থাকে তৃতীয় নয়ন, যা তাঁদের নকল অন্য কোন রূপে থাকা সম্ভব নয়। স্বামীজী আপনি অনেককেই বোকা বানাতে পারেন, কিন্তু সকলকেই যে পারবেন তেমনটা তো সম্ভব নয় ! যা যা করছেন তা আর করবেন না। এভাবে মানুষকে ঠকানো পাপ ! মিথ্যাচার এ ! প্রেতাত্মাদের কাজে লাগাচ্ছেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য ! নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করতে এত লোভ আপনার ! কিন্তু, তাতে করে নিজের ক্ষতি ডেকে আনছেন যে তা কী বোঝেন না? এতে আপনার পরমার্থ হিতসাধন কিছুই হবে না ।”

একথা শুনে নারায়ণস্বামী প্রভুপাদের চরণে পড়ে গেলেন, বললেন , “প্রভু ক্ষমা করে দিন। কথা দিচ্ছি ,আর এমন কাজ করবো না । তবে আপনার কাছে অনুরোধ আপনি আমার এই কুকীর্তির কথা কাউকে জানাবেন না দয়া করে। আমি ভুল করেছি। অপরাধ স্বীকার করছি ।কিন্তু এখন যদি ব্রজবাসীরা এসব জানতে পারে তাহলে আমার আর মুখ দেখাবার স্থান থাকবে না । আপনি কৃপা করে আমায় মার্জনা করে দিন। আমি আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো কথা দিলাম। বিশ্বাস করুন আমায় ! ”

প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন ক্ষমা করার । তারপর , কোন কথা না বলে বেড়িয়ে গেলেন সাধুর আশ্রম থেকে।
(ক্রমশঃ)
—–ভক্তকৃপাভিখারিণী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক