কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহতদের উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক শহীদ স্মরণসভা শীতলকুচিতে।

0
230

মনিরুল হোক, কোচবিহারঃ কেউ ছবির সামনে বসে চোখের জল মুঝছে আবার কেউ কবরের পাশে বসে একমনে দোয়া করছেন। অভিশপ্ত সেই দিনটির স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছে না ওই গ্রামের পরিবার গুলি। তাদের স্বপ্নেও দুঃস্বপ্ন হয়ে হানাদেয় স্বজন হারানোর যন্ত্রনা।
শীতলকুচি গুলি কান্ডের আজ বর্ষপূর্তি। গতবছর ১০ই এপ্রিল চতুর্থ দফা নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে দুস্কৃতিদের ছোড়া গুলিতে শীতলকুচির পাঠানটুলি গ্রামের ২৮৫ নং বুথে খুন হন আনন্দ বর্মন। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের জোরপাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫/১২৬ বুথের আমতলী গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় সামিউল হক, হামিদুল মিঞা, মনিরুজ্জামান নূর, আলম তরতাজা যুবকের।
রমজানের মাসে গোটা পাড়া জুড়ে নতুন করে শোকের ছায়া। সামিউলের বাবা আবছার আলি বলেন, তাঁর ছেলে যদি কিছু অন্যায় করতো, ওরা লাঠি দিয়ে পেটাতে পারত। হাতে কিংবা পায়ে গুলি করতে পারতো কিন্তু এভাবে ছেলেটাকে মেরে ফেলল কেন! বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
প্রসঙ্গত,১০ এপ্রিল ২০২১ চতুর্থ দফা বিধানসভা নির্বাচনে শীতলকুচী বিধানসভা কেন্দ্রের ১২৬ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় চারজন যুবক। এক বছর পূর্ণ হলেও অভিযুক্তরা আজও অধরা ক্ষোভ মৃত চার পরিবারের সদস্যদের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভিযুক্ত চার জওয়ানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেন্দ্রীয় ক্ষতিপূরণের দাবিতে শহীদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির ডাকে ঐতিহাসিক শহীদ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এমএসকে মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষনা মত চারটি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার সদস্যদের একজন করে ইতিমধ্যে রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড পদে চাকরি পেয়েছেন।
বিষয় নুর আলম মিয়া যিনি খুন হয়েছেন তাঁর পিতা জোবেদ আলী মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলেও আমার পরিবারের কারো চাকরি হলো না। মেয়েকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও চাকরি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন তিনি যেন দ্রুততার সঙ্গে আমার মেয়ের চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়। না হলে পথে বসতে হবে আমাকে।
নিহত মনিরুজ্জামানের জ্যাঠামশাই হাজী আশরাফ আলী বলেন, আমাদের পরিবারে চাকরি হলেও অপরাধীরা এখনো শাস্তি পেল না অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কেন্দ্র ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজেপির নির্বাচিত বিধায়ক যিনি রয়েছেন তিনি আজ পর্যন্ত আমাদের এখানে এসে একবারের জন্য এসে দেখা বা খোঁজ খবর নেননি।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অর্থানুকূল্যে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে। এক বছরে ধরলা দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে। নিহতদের স্বজনরা ঘটনার বর্ষপূর্তিতে চাইছেন দ্রুত বিচার। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা কোচবিহার পৌরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হিতেন বর্মন, তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন, আয়োজক কমিটির পক্ষে শহীদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি আলিজার রহমান, পরিমল বর্মন, খোকন মিয়া সহ অন্যান্য অতিথিবর্গ।
শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন কিছুক্ষণের জন্য এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। অপরদিকে সকাল সকাল পাঁচের ১২৬ নম্বর বুথে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করতে যান তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার সভাপতি কমলেশ অধিকারী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
এদিন মাথাভাঙা শহরে বেশ কয়েকটি জায়গায় শহীদ দিবস পালন করা হয়। গোলকগঞ্জ চৌপথিতে শহীদ দিবস পালন করা হয়। এদিকে গত ১০ এপ্রিল যে চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বারা খুন হয়েছিলেন তাদের পরিবারের তিন জনকে চাকরি দেওয়া হলেও আরেকজনকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত ওই পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার আবেদন জানান।
এ ব্যাপারে নেতৃত্বরা জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই নিহত নুর আলম হোসেনের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সাথে গত ১০ এপ্রিল সকাল বেলায় শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের ২৮৫ নাম্বার বুথে পাঠানটুলিতে জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের দাঁড়া খুন হন আনন্দ বর্মন। আজকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও আনন্দ বর্মনের শহীদ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত ভোটারদের পরিবারের আক্ষেপ এখনো পর্যন্ত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং উপযুক্ত বিচার পাওয়া যায়নি। তাই দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে ফাঁসির সাজা চাইছেন নিহত পরিবারের সদস্যরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here