বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসে নজির গড়লো কুলতলী ব্লক।

0
402

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং –  এর আগে ছয় টি সন্তান হয়েছে বাড়িতে।সপ্তম সন্তান বাড়িতেই হবে সেটাই ঠিক ছিল আঞ্জুয়ারা সরদারের পরিবারের তরফ থেকে। গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি পরিবারের তরফ থেকে। আর তাই সেই মতো সপ্তম সন্তানকে হাসপাতালে না এনে তিনদিন প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করে ডেলিভারি করালেন বাড়িতেই। কিন্তু অবশেষে স্বাস্থ্যকর্মীদের জেদের কাছে হার মানলেন পরিবার। সারাদিনের লড়াই শেষে সন্ধ্যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে এনে ভর্তি করালেন ওই প্রসূতি মা ও শিশু কে।

আর তার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে তরফ থেকে পালন করা হলো বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস।

সুন্দরবনের কুলতলী হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম পিছিয়ে পড়া একটি ব্লক। যেখানে বাড়িতেই প্রসব করতে পছন্দ করেন ওই এলাকার মানুষরা। স্বাস্থ্যদপ্তরে বিভিন্ন প্রচার,আশা কর্মীদের পরিশ্রম কোনটাই কাজে আসে না এই ব্লকে। একটি অংশের মানুষ পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে শিশু জন্মের ’শংসাপত্র পেয়ে যাবেন সেই বুঝেই প্রসব করানোর ব্যবস্থা করেন বাড়িতেই। সোমবারও তেমনই করানো হয়েছিল আঞ্জুয়ারা সরদার কে। কুলতলির ৮ নম্বর তেঁতুলবেড়িয়া এলাকা থেকে ওই মহিলাকে কোনভাবেই আনানো যাচ্ছিলো না হাসপাতালে। কিন্তু সপ্তম বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে যথেষ্ট সমস্যার মধ্যেই পড়েছিলেন ওই মহিলা। মহিলার অবস্থা বেগতিক বুঝেও পরিবারের লোকজন তাকে কোনমতেই আনতে রাজি নন হাসপাতালে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই প্রসূতির বাড়িতে বসে থাকেন সারাদিন । কিন্তু কোনমতেই তাকে হাসপাতাল মুখো করানো যাচ্ছিল না। উল্টে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার শুরু করেন পরিবারের লোকজন। অবশেষে ভারপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক চিত্রলেখা সরদার কুলতলী ব্লক হাসপাতাল থেকে নিশ্চয় যান গাড়ি পাঠিয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে এসে ভর্তি করেন হাসপাতালে। বর্তমানে যথেষ্ট ভালো আছে মা ও সদ্যজাত শিশু। শিশুটির ওজন তিন কেজি ৯০ গ্রাম।

এ বিষয়ে চিকিৎসক চিত্রলেখা সরদার বলেন, কুলতলী ব্লকে প্রতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে। আমরা চাই প্রত্যেকটি শিশু হাসপাতালেই জন্ম গ্রহণ করুক। শুধু তাই নয় সরকারের সমস্ত সুযোগ সুবিধা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের থেকে মা ও শিশু যাতে পায় সেই ব্যবস্থাই করা হয়ে থাকে। ১১ ই এপ্রিল নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। আর তাই শিশুর সঙ্গে মা ও নিরাপদে সুস্থ থাকবে এটাই আমরা চাই।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে এদিন বিধায়ক গণেশ মণ্ডল, কুলতলী ব্লকের বিডিও বীরেন্দ্র অধিকারি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যথেষ্ট সহায়তা করেন এই মহিলাকে হাসপাতাল মুখো করতে।

উল্লেখ্য রাজ্য সরকার চাইছে সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১০০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী করাতে। কিন্তু গ্রামের মানুষের অজ্ঞতা এবং কিছু মানুষের জেদের কাছে হার মানছে সরকারের সেই উদ্যোগকে। এর ফলে বিভিন্ন সময় মৃত্যু ঘটছে মা ও শিশুর। বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া ব্লক ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী হলেও কুলতলী ব্লকে এখনো বাড়িতেই বাচ্চা প্রসবের হার যথেষ্টই বেশি। যা ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তরকে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here