আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ পায়ে পায়ে ৫০টা বছর পার হয়ে গেল দাম্পত্য জীবনের। এই ৫০ বছরের প্রেমে বেশ মরচে ধরে গিয়েছিল। তাই এবার সেই মরচেটাকে সরিয়ে অর্ধশতকের প্রেমটাকে ঝালিয়ে নেওয়ার আয়োজন করল অসমবয়সী বন্ধুরা! হ্যাঁ, সম্পর্কটা যখন ঠাট্টা-তামাশার তখন বন্ধু বৈকি! বন্ধুরা হল নাতি-নাতনি নাতবউরা। তাদের সঙ্গ দিতে এগিয়ে এসেছিল ছেলে বউমারাও। ৫০ বছরের বিবাহবার্ষিকীতে ফের বিয়ে দেবে দাদু-ঠাকুমার। বর কনে রাজি ছিলনা প্রথমে। এক বিয়েতেই রক্ষে নেই আবার বিয়ে! অসম্ভব! প্রায় রেগেই উঠেছিলেন ৭৮ বছরের বর ইন্দাসের মেরাল গ্রামের বাসিন্দা নির্মলেন্দু মাজি। তবে ‘বেলা শেষে’ এসে দ্বিতীয় বার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে খুব একটা অরাজি ছিলেন না ৬৬ বছরের পাত্রী কানন বালা মাজি। সেই কোন ছোটবেলায় একবাড়ি মানুষের মাঝে পুটুলির মত শাড়িটাকে জড়িয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। কতো ঠাট্টা ইয়ার্কি হয়েছিল। বাসরঘরে নতুন বরের পাশে সলজ্জ ভাবে পুতুলের মতো বসে ছিলেন।
ভাল করে মনেও পড়ে না সেই বিয়ের কথা।
তাই কানন বালা দেবীর মনের ইচ্ছে ছিলই নাতি নাতনিদের একটু আস্কারা দেওয়ার। তাই তো বিয়ের অনুষ্টানে এক বাড়ি লোক আর সানাই বাদ্যের সূরের মাঝে কনের সিংহাসনে বসে অকপটে স্বীকার করলেন ‘দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৫০ বছর হয়ে গেল। এই ৫০ বছরে এসে ছেলে বউমা নাতি নাতনিরা যেটা করল সেটা ক’জন করতে পারে? বিয়ের অনুষ্টানে যা যা হয়ে থাকে আজ তার সবই হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগছে’। এই ‘আবার বিয়ে’ পর্বে মালা বদল, সিঁদুর দান, হস্তবন্ধন সবকিছুই হয়েছে ঠিক নতুন বিয়ের মতোই। আলোর সাজে সাজানো হয়েছিল গোটা বাড়ি। মাইকে বেজেছে সানাইয়ের সুর। পাড়াপ্রতিবেশি থেকে আত্মীয়স্বজন গ্রামের মানুষ মিলিয়ে নিমন্ত্রিতর সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। প্রায় ৩৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথি ক্যাটারিংয়ের রান্না মাংস পোলাও পেটপুরে খেলেন। অতিথিরা এসে বর কনের হাতে তুলে দিলেন নানান উপহার। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজনের মাঝে অর্ধশতাব্দীর বিবাহ ফের ‘রি-নিউ’ করে পাশাপাশি সিংহাসনে বসে মাজি দম্পতির হয়তো মনে পড়ছিল প্রথম দেখার সেই লাজুক দিনটার কথা। রোমাঞ্চ লাগা বাসর রাতের কথা। এভাবেই ঘটল ৭৮ আর ৬৬-র মধুরেণসমাপয়েৎ।