নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বারো মাসে তেরো পার্বণের শান্তিপুরের রাজপথে শোভাযাত্রাও এখন ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে দুর্গা পুজো কালীপুজো জগদ্ধাত্রী এবং রাসের পুজো উদ্যোগক্তাদের সংখ্যা এবং শোভযাত্রায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও।
শুধু উৎসব প্রেমী শান্তিপুরবাসীই নয়, নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে থেকেও ভক্তবৃন্দরা আসেন জগৎ বিখ্যাত ঐতিহ্যমন্ডিত শান্তিপুরের রাস দেখতে। গত দু বছরে করোনা পরিস্থিতির পর, এ বছর দর্শনার্থীদের সংখ্যা যে অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে তা পুজো উদ্যোক্তাদের থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনও মানছেন এক বাক্যে। তবে সদ্য সমাপ্ত হওয়া দূগা পূজা এবং কালীপুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায় তিক্ত অভিজ্ঞতা দর্শনার্থীদের। একদিকে পুজো উদ্যোক্তাদের ক্ষোভ প্রশাসনিক মিটিং এ গৃহীত সিদ্ধান্ত , কার্যকারী হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই, অন্যদিকে প্রশাসনিক অভিযোগ এত মানুষের সমাগম এবং উচ্ছ্বাস সামান্য কিছু পুলিশ প্রশাসনের ওপর শুধুই নির্ভর করে থাকলে হবে না, এ বিষয়ে নিজেদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে অন্যের শোভাযাত্রা দেখানোর দায়িত্বে। বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী, শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ বারংবার সেই অনুরোধই জানিয়েছিলেন। হয়তো সমন্বয়ের অভাবেই, শোভাযাত্রা সফলতা পায়নি ।
তাই আসন্ন রাস উৎসব উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শান্তিপুর থানায় এক প্রশাসনিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত, রানাঘাট পুলিশ জেলার এসডিপি ও প্রবীর মন্ডল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী। শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ, দমকল বাহিনীর উচ্চপদস্থ অধিকারীক। শান্তিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক লালটু ঘোষ, সি আই গৌরী প্রসন্ন বন্ধু সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা। আসন্ন রাস উৎস উপলক্ষে এই প্রশাসনিক বৈঠকে শান্তিপুরের সমস্ত বিগ্রহবাড়ি ও বারোয়ারি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিপুল পরিমাণে দর্শনার্থীদের আগমনের আন্দাজে এবারে পুলিশকর্মী সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সমন্বয়ের জন্য, শুধুমাত্র গতকালকের মিটিং নয় আজ একটি পর্যবেক্ষণ দল সব ঘুরে দেখবে সমস্ত শোভাযাত্রার রাস্তাটি। যাতে অংশগ্রহণ করবে জনপ্রতিনি,জেলা প্রশাসনের সাথে পুজো উদ্যোক্তারাও। শোভাযাত্রার রাস্তায় ঝুলে থাকা বিভিন্ন কেবল লাইন এবং নেটওয়ার্কে তার সরিয়ে নেওয়ার জন্য আগামী ৭ তারিখ সময় সীমা ধার্য করেছে জেলা প্রশাসন, অন্যথায় তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেই জানিয়েছেন। বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাবধানতার কথা উল্লেখ করেন, প্রথমত পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে কর্তব্যপরায়ণ দায়িত্বশীল একটি দল বানিয়ে সারারাত পাহারা দেবার ব্যবস্থা, এবং শোভাযাত্রার দিন সকলে একসাথে বাড়ি অন্ধকার না করে রাখার পরামর্শ দেন। সব ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক সহযোগিতা মিলবে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ, পৌর পরিষেবা বৃদ্ধি করা এবং বিপুল সংখ্যক সাফাই কর্মী স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়তি দায়িত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয় উৎসবের দিনগুলোতে আলো ঝলমলে রাত উপহার দেবেন তারা, ২৪ ঘন্টা কর্মীরা পরিষেবার জন্য প্রস্তুত।
ভ্রাম্যমান পুলিশ ,মহিলা পুলিশ সহ বিভিন্ন ধরনের পুলিশকর্মী প্রত্যেক বিগ্রহ বাড়ি এবং বারোয়ারিতে একজন করে হোম গার্ড অথবা সিভিক ভলেন্টিয়ার শান্তিপুর থানার সাথে সমন্বয়কারী হিসাবে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসন। শোভাযাত্রার ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসনের দেওয়া সময় সীমা মেনে চলতে হবে, তা দেখার জন্যও থানার পুলিশকর্মী থাকবেন একজন করে।
বাড়তি এই তৎপরতা থেকে এবছর উৎসব প্রেমী দর্শনার্থীদের শোভাযাত্রার সম্পূর্ণ আনন্দ লাভ করাতে পারবেন বলেই মনে করছেন সুশীল সমাজ।