রাখি বন্ধন নিয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত। তবে রাখি বন্ধন ভারতীয়দের মধ্যে একটি বড় উৎসব।
এই রাখিবন্ধন এর তিনটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়,
যেমন,—
● [১] রামাযানে রাম সমস্ত বানর সেনাদের ফুল দিয়ে রাখি বেধে ছিলেন ।
●,[২] লক্ষ্মী বানররাজ তথা সুগ্রীবের বড় ভাই বালিকে ভাই হিসেবে রাখি পরিয়েছিলেন। যার কারণে বালি তা উপহার স্বরূপ বিষ্ণু তথা নারায়ণনকে স্বর্গে তার কাছে ফিরে যেতে বলে।
●[৩] সাম্প্রদায়িকতা মেটাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রাখি বন্ধন উৎসবের প্রচলন করেছিলেন।
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ভাইয়ের হাতে রাখি পরানোর নিয়মটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
আর এই নিয়মটি যদিও একাধিপত্যের বার্তা বহন করে তাই এই ভাই বোনের সম্পর্ককে মেনে মানুষ সচেতন হবে। এখন অবশ্য প্রতিটি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের রাখি উৎসব পালন করা হয় আর সেটা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পালন করে থাকে।
রাখি বন্ধন উৎসব ভাইবোনের সম্পর্ককে এক স্বর্গীয় সম্পর্কে পরিণত করে। রাখির এই বন্ধন সম্পর্কের নামেও পরিচিত সম্পর্ককে রক্ষা করে। রাখি বন্ধন আমাদের ভারতবর্ষে প্রতি বছর শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিন পালন করা হয়, তখন বোনেরা তাঁদের ভাইদের হাতের কব্জিতে নানান সুন্দর সুন্দর রাখি পবিত্র সূতা দ্বারা বেঁধে দেয়। যা ভাইদের “নিরাপত্তার চিণ্হ হিসেবেও রাখি বন্ধন সমাজে মান্যতা লাভ করে। বোনেরা তাঁদের ভাইদের জন্য ঈশ্বরের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করে এবং ভাইয়েরাও তাঁদের বোনদের রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে সুরক্ষা প্রদান করার অঙ্গীকার করেন। রাখি পূর্ণিমা দিন পরিবারের সকলে মিলিত হয়ে নানান , বিশেষ খাবার দাবারের সাথে একে অপরকে উপহারের মাধ্যমে আন্তরিক আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা করে এবং সকলে মিলে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে দিনটি পালন করে। রাখি পূর্ণিমার এই বিশেষ দিনে পরিবেশে “যম” তত্ত্বটাই বেশি থাকে বলে , বোনেরা ভাইদের রক্ষা হেতু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে রাখি বন্ধনের দ্বারা এই বিপদ থেকে ভাইদের সুরক্ষিত রাখার প্রয়াস করে এবং এর ফলে সব বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যায় বলে মত পোষন করে।
আবার রাখিবন্ধনের আরেকটি নেপথ্য ইতিহাস হলো:-
শ্রীকৃষ্ণের ছোট বোন ছিলেন সুভদ্রা। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সেই সুভদ্রাকে বোনকে ভীষণ ভালবাসতেন। এদিকে পঞ্চপাণ্ডপ পত্নী দ্রৌপদী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের ভীষণ স্নেহভাজন বোন । যদিও দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণের আপন বোন ছিলেন না তবুও তাঁদের এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল ভাইবোনের। সেটা নিয়ে একদিন সুভদ্রা অভিমান করে শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন এর কারন সমূহ। উত্তরে তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন সুভদ্রাকে যে, সঠিক সময়েই সুভদ্রা এর কারন সব জানতে ও বুঝতে পারবে।
এর কিছুদিন পরেই শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত ঝড়ছিল, আর তা দেখেই সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু মনের মত হাত বাঁধার জন্য ভালো পাতলা কাপড় পাচ্ছিলেন না, তখন এর মাঝেই দ্রৌপদী এসে পৌছলেন। শ্রীকৃষ্ণের হাতে রক্ত ঝড়ছে দেখে দ্রৌপদী তৎক্ষনাৎ নিজের অতি মুল্যবান রেশমের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের হাত বেধে দিলেন। এর কিছুক্ষন পরেই হাতের রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেলো আর তখন শ্রীকৃষ্ণ সুভদ্রাকে বললেন, – এখন বুঝতে পারলে তো ? কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি? সুভদ্রা তখন বুঝতে পারল যে, ভক্তি, পবিত্র ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জিনিসটা কি ।
শ্রীকৃষ্ণের চেয়েও যে সুভদ্রার মুল্যবান বস্ত্র বেশি প্রিয় ছিল সুভদ্রার কাছে, এটা ভেবেই সুভদ্রা লজ্জিত হলো।
কারণ, কোন বোন তাঁর ভাইয়ের কোনো কষ্ট বা অমঙ্গল সহ্য করতে কখনোই পারে না। তাই ভাইয়ের কষ্ট দুর করার জন্য বোন তাঁর সর্বত্তম চেষ্টাই করে থাকে। অপর দিকে ভাইও তাঁর বোনকে এই পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি স্নেহ ও ভালোবাসে এবং বোনকে সারাজীবন রক্ষা করার অঙ্গীকার করে। যেমন, শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে পাশাখেলার আসরে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে বস্ত্র দিয়ে দ্রৌপদীর সন্মান রক্ষা করেছিলেন।
সকল ভাইবোনেরও উচিত এই পবিত্র রাখি পূর্ণিমার দিনে মনেতে এইরকম ভক্তিভাব ভালবাসা বজায় রাখা উচিত।
কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতার বর্তমান যুগে ভাই বোনের মাঝে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার আজ বড়ই অভাব। আমাদের হিন্দু সনাতন ধর্মে বড়বোনকে মার আসনে এবং বড় ভাইকে পিতার আসনে বসিয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে।
——————————————-